ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেছেন, দেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। এর বাইরে আরো ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আইন শেখ হাসিনা সরকার পাস করে গেছে। মোট ৬১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫টিই বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে।
কিন্তু কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাজউদ্দীনের নামে? কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে জাতীয় চার নেতার অন্যান্য সদস্যের নামে? কয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে বিজ্ঞানী বা শিক্ষাবিদদের নামে? জীবিতাবস্থায় ও ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় পৃথিবীর কোনো দেশের সরকার প্রধান কি তার নিজ নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে?
শুক্রবার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।
অধ্যাপক মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর নিজের বাড়ি গোপালগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় বানালো এবং নাম দিলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে ভিসি ও শিক্ষক নিয়োগ পর্যন্ত কোনো কিছুর মধ্যে মায়া ছিলো না। ছিলো কেবল রাজনীতি।
এটাকে পারতো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে। এতে তো দেশের ছেলেমেয়েরাই উপকৃত হতো। কিন্তু দেশের ছেলেমেয়েদের উপকার করাতো তার একটুও উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং ছেলেমেয়েদের দিয়ে কীভাবে রাজনৈতিক ফায়দা লোটা যায় সেই উদ্দেশ্য ছিলো। তিনি চাইতেন ছেলেমেয়েরা ছাত্রলীগ করবে, যারা না করবে তাদেরকে মেরে কেটে হলেও বাধ্য করবে মিটিং মিছিলে যেতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠে টর্চার সেল।
ঢাবির এই অধ্যাপক বলেন, বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে যদি সত্যিকার অর্থে ভালোবাসতেন তাহলে এতোগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার নামে না করে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারতেন যার নাম বিশ্ব জানবে। একটি বিশ্বখ্যাত শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বড় অ্যাম্বাসেডর আর হয় না। আসলে বাবাকে শ্রদ্ধা দেখানো তার উদ্দেশ্য ছিলো না। উদ্দেশ্য ছিলো বাবার ইমেজকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে লাভবান হওয়া।
এছাড়াও ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (২০১৩), গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (২০১৬), নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট (২০১৮), লালমনিরহাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ (২০২১), শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা (২০২১), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর (২০২২), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ (২০২৩) নামকরণ করা হয়। এ ছাড়া ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে আইন পাস হওয়া দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ।
এছাড়া সরকারি ৩৭টি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের নামে রয়েছে ছয়টি। সেগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ, গোপালগঞ্জ, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, জামালপুর, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ, হবিগঞ্জ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ, সুনামগঞ্জ।
এইসবতো বিশ্বরেকর্ড। নিজের বাবা মা, ভাইবোন, নিকটাত্মীয়দের এমপি মন্ত্রী দলীয় পদ দিয়ে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছিলেন। তিনি নিজের বাবা মা, ভাইবোন, নিকটাত্মীয় ও দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি বা কখনো হতে চাননি। দেশের সাধারণ মানুষকে তিনি মানুষই ভাবতেন না।
অধ্যাপক মামুন আরো বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো শিক্ষাকে অবহেলা করা এবং তিনি এটা খুব ভেবেচিন্তেই করেছিলেন। তিনি চাননি দেশের মানুষ সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত হোক।
অধ্যাপক মানুম বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) চেয়েছিলেন শিক্ষিত নামধারীর সংখ্যা বেড়ে তার সরকারের পরিসংখ্যান ভালো হোক। এইজন্যই সারা দেশের প্রায় সব কলেজে অনার্স মাস্টার্স খুলেছিলেন যেনো দেখাতে পারেন দেশের যুবকরা বেকার না। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষক ও সুযোগ সুবিধা দেননি। তারই ফল আজ ভোগ করছেন। আমি এটা নিয়ে অনেক লিখেছিলাম।