মেডিকেলে উচ্চ শিক্ষায় খরচ বাড়ছে। গত মাসে এমডি, এমফিল, ডিপ্লোমা কোর্সে ফি দ্বিগুণ বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। কোর্স ফি বেড়ে যাওয়ায় শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দ্বিগুণ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিএসএমএমইউর অর্থ কমিটি। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায। প্রতিবেদনটি লিখেছন জয়শ্রী ভাদুড়ী।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছর এমডি, এমফিল, ডিপ্লোমা কোর্সে পরীক্ষা ফি বাড়েনি। খরচ সমন্বয় করতে দ্বিগুণ নয় আমরা ২০ শতাংশ ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি এই সুপারিশ করেছে। যেসব শিক্ষার্থী ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ফি জমা দিয়েছেন, তাদের বাড়তি টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফি কার্যকর করা হবে। গত মাসে ফি বাড়ানোর যে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল সে সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসবে।’
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকমে ভর্তি বিজ্ঞাপন দিন ৩০ শতাংশ ছাড়ে
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা যায়, দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পরে চিকিৎসকরা উচ্চ শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে এমডি, এমফিল, ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন। এমডি কোর্স পাঁচ বছর মেয়াদি, ডিপ্লোমা দুই বছর এবং এমফিল কোর্স দেড়-দুই বছর মেয়াদি হয়ে থাকে। কিন্তু এসব কোর্সে পাসের হার কম হওয়ায়, শিক্ষার্থীদের কোর্স সম্পন্ন করতে সময় আরও বেশি লেগে যায়। বিএসএমএমইউর আওতায় বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে বছরে দুবার এসব কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকে। এজন্য আবেদন করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে হয়। গত ৯ জুলাই বিজ্ঞপ্তিতে এমফিল পার্ট-১, ২ এর পরীক্ষার্থীদের ফি ১০ হাজার ২৫০ টাকা, এমফিল ফাইনাল পার্টে ১০ হাজার ৬৫০ টাকা, এমডি ফাইনাল পার্টে ১১ হাজার ৪৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। ডিপ্লোমার পরীক্ষার্থীদের ১১ হাজার ৭৫০ টাকা এবং অকৃতকার্য হলে পুনরায় পরীক্ষা দিতে ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে জানিয়ে নোটিস দেওয়া হয়। চার মাসের ব্যবধানে হঠাৎ করে পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৮ নভেম্বর বিএসএমএমইউর দেওয়া নোটিসে এমফিল পার্ট-১, ২ পরীক্ষার ফি ধরা হয় ১৫ হাজার টাকা, এমফিল, এমডি ফাইনাল পার্টে ২২ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে নোটিস দেওয়া হয়। ডিপ্লোমা কোর্সে ফি প্রায় দ্বিগুণ করে ২০ হাজার টাকা এবং অকৃতকার্য হলে পুনরায় পরীক্ষা দিতে ১ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। দ্বিগুণ হারে ফি বাড়লে বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এমডি কোর্সে ভর্তি শিক্ষার্থী ফয়সাল হাসান জানান, ‘এমডি, এমফিল, ডিপ্লোমা কোর্স চলাকালীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি কিংবা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার নিয়ম নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা প্রেষণে কোর্স করতে পারেন।
কিন্তু চেম্বার করতে পারেন না। তাই সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষার্থীরা বেতন পেলেও অন্য শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি হিসেবে পাওয়া ২০ হাজার টাকার ওপর নির্ভর করতে হয়। এই অর্থেই সংসার চালিয়ে পড়াশোনার খরচ বহন করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোর্সে পাসের হার কম হওয়ায় কয়েক বছর লেগে যায় কোর্সে। প্রথম ছয়বার ১ হাজার টাকা জরিমানা দিলেও পরের দুবারে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। তারপর এই বাড়তি ফির খরচ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।’ জানা যায়, প্রতি সেশনে বিএসএমএমইউর আওতায় বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী এই কোর্সগুলোতে ভর্তি হয়। কোর্সগুলোতে পাসের হার ৫-৭ শতাংশের ঘরে। তাই অকৃতকার্য হয়ে জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের হার অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে জরিমানাসহ পরীক্ষার বাড়তি ফি দিতে হিমশিম অবস্থা শিক্ষার্থীদের। গত নভেম্বরে বাড়তি ফির নোটিস দেওয়ার পর থেকে তা কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থী চিকিৎসকরা। তারা আগের কোর্স ফি বহাল রাখার জন্য বিভিন্ন ফোরামে উপস্থাপন করে আসছিলেন। তবে আগের ফি বহাল না রাখলেও দ্বিগুণ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বিএসএমএমইউ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান িবলেন, ‘এমডি, এমফিল, ডিপ্লোমা কোর্সের ফি অনেক বছর ধরে একই আছে। সার্বিক বিষয় চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কমিটি ২০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রেখে সহনশীল পর্যায়ে ফি রাখা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’