বাড়িতে খাবার না থাকায় স্কুলে আসা বন্ধ করে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার বাচ্চারা। স্কুলও জানিয়েছে, খাবার না থাকলে বাচ্চাদের পাঠানোর দরকার নেই। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের চাকরি গেছে, ব্যবসা লাটে উঠেছে। খাবার, ওষুধ, জ্বালানি কেনার পয়সা নেই বহু পরিবারের। বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটের মুখে দেশটির শিশুদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
নাদিকা প্রিয়দর্শিনী নামের এক অভিভাবকের সমস্য তুলে ধরেছে গণমাধ্যমটি। নাদিকা শ্রীলঙ্কার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি বস্ত্র কারখানার কর্মী।
তিনি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। কারণ, বাড়িতে খাবার নেই। প্রবল অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে, তার পরিবার দিনে এখন একবার কিছু সবজি দিয়ে ভাত খাচ্ছে। কোনো কোনো দিন তাও জুটছে না। বাড়িতে খাবার নেই। চাল ডাল কেনার পয়সা নেই। এই অবস্থায় বাচ্চাদের কী করে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না তিনি। প্রিয়দর্শিনী একা নন, একই অবস্থার মুখে পড়েছেন অনেকে।
জানা গেছে, শ্রীলঙ্কায় দানাশস্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তড়িঘড়ি করে সরকার অর্গানিক কৃষির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তাই এই বছর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফসল কম হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় খাদ্য শস্যের উপর মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ছিল ৯৪ শতাংশের বেশি। এ পরিস্থিতিতে খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও দাম খুবই বেশি, তাই সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন প্রিয়দর্শিনীর মতো অস্বচ্ছল মানুষেরা। তারা তাদের প্রতিদিনের আয়ের উপরই বেঁচে থাকেন। ফলে এখন তাদের কাছে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। গত মাসে শ্রীলঙ্কার ৩৬ শতাংশ পরিবার নিয়মিত খাবার পায়নি।
গত জুনে ইউনিসেফ জানিয়েছিল, শ্রীলঙ্কার ৫৬ হাজার বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগছে। বাচ্চারা তাই স্কুলে যেতে পারছে না। খালি পেটে পড়াশুনা হয় না। প্রিয়দর্শিনী জানান, স্কুলে কিছু বাচ্চা টিফিনের ব্রেকে খাবার খাচ্ছে। কিন্তু আমার বাচ্চাদের কাছে কোনো খাবার নেই। তাই আমি কী করে ওদের স্কুলে পাঠাবো, প্রশ্ন রাখেন তিনি। তার ১৩ বছর বয়সি ছেলে তাও জোর করে স্কুলে গেয়েছিলো। সে বলেছিল, খালি পেটেই সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ছয় বছরের মেয়ে কী করে যাবে? ওই বাচ্চা মেয়ে তো খিদে ভুলে পড়তে পারে না। খেতে না পাওয়ার জন্য কতজন বাচ্চা স্কুলে যেতে পারছে না, সেই সংখ্যাতত্ত্ব সরকার দেয়নি।
তবে গত জুন মাসে জাতিসংঘের রিপোর্ট জানিয়েছে, সব স্কুলে খাবার দেয়া হয় না, সেখানে বাচ্চারা যাচ্ছে না। ইউনিসেফের মুখপাত্র জানিয়েছেন, কিছু এলকায় স্কুলে বাচ্চাদের যাওয়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশে।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব তারা ডি মেল জানিয়েছেন, খাবার পেলেই বাচ্চারা স্কুল যাবে। না হলে গ্রামের দিকে বা যে সব স্কুলে গরিব বাচ্চারা পড়ে, সেখানে তারা খালি পেটে স্কুলে যাবে না।