খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানকে তলব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত কমিটি। নিয়মবহির্ভূতভাবে পছন্দের লোককে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য শুনতে তাকে তলব করা হয়। গত ৪ এপ্রিল ওই তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব এবং ইউজিসির উপ-পরিচালক মো. গোলাম দস্তগীর স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ডিসিপ্লিনে (বিভাগ) ওয়ালিউল হাসানাত নামের একজন অধ্যাপকের নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছিল। এ ঘটনায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ইউজিসির চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দিয়ে ওই শিক্ষকের নিয়মবর্হিভূত নিয়োগের বিষয়টি জানিয়ে তা তদন্ত করার অনুরোধ করা হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৫ জুন ইউজিসি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে ওই তদন্ত কমিটির কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি ছিল না। পরে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির সদস্যরা সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেন। ইউজিসি গঠিত ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বাসুদেব চন্দ্র ঘোষ। কমিটির অপর সদস্য হচ্ছেন ইউজিসিরি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমান।
অধ্যাপক ফায়েক উজ্জামান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। বর্তমানে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান পদে কর্মরত তিনি। ফায়েক উজ্জামান ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক মো. শাইফুদ্দিন শাহ। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তার মেয়াদ শেষ হলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ফায়েক উজ্জামান।
এরপর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ১০ জানুয়ারি তিনি পূর্ণ উপাচার্যের দায়িত্ব লাভ করেন। সেখান থেকে পরপর দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান তিনি। তার দ্বিতীয় মেয়াদে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের পর সেটি রেজুলেশন করতে হয়। তারপর শিক্ষককে যোগদান করার জন্য চিঠি পাঠাতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তার কিছুই করা হয়নি। রেজুলেশন করার আগেই ওয়ালিউল হাসানাত রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি দিয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছেন।
জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, তদন্তের স্বার্থে দুদক থেকে চিঠি পাঠিয়ে ওয়ালিউল হাসানাতের নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়। ওই কাগজগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে কিছু অনিয়মের তথ্য দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লিয়েনে থাকা সময়কে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে তা দেখানো হয়েছিল। অন্যদিকে রেজুলেশন না করেই তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়।