খুলনা মহানগরীর অধিকাংশ স্কুলে মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়া হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাব, ল্যাব সংকট, অনীহার কারণে শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেন না। এতে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির নীতিও ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।
নূর নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষিকা নুশরাত শায়লা বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার জন্য সব উপকরণ স্কুলে রয়েছে। মাঝে মাঝে ক্লাস নেই। তবে সমস্যা হলো একটিমাত্র কক্ষে উপকরণ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে অসুবিধা হয়। ক্লাসের নির্ধারিত সময়ও কমে যায়। তিনি আরও বলেন, আলাদা কক্ষে বরাদ্দ না দেওয়া এবং দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বেশিরভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কন্টেন্ট তৈরির যে নেট ফ্যাসিলিটি রয়েছে সেটিও অপ্রতুল। শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে ইন্টারনেট বা ডাটা কিনে কন্টেন্ট তৈরি করতে হয়। এ কারণে অনেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
চলতি বছর সারা দেশে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হয়েছেন সহকারী শিক্ষিকা রুমানা আফরোজ। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাত রাস্তার মোড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুমানা বলেন, এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাস করতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হয়। তবে বেশ কিছু জটিলতায় অনেক সময় নিয়মিত ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ায় তারা বিরক্ত হয়। এ ক্ষেত্রে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হলে শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি সুবিধা পাবে। তিনি আরও বলেন, মাঝে মাঝে প্রজেক্টর বা ল্যাপটপ নষ্ট থাকে। তখন ক্লাস নেওয়া যায় না। দেড় মাস ধরে স্কুলের প্রজেক্টর নষ্ট। এ কারণে ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না।
নগরীর একেবারে শেষ প্রান্তে বানিয়াখামার এলাকার ডি আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার আলাদা কক্ষ রয়েছে। সেখানে প্রজেক্টরের পাশাপাশি পর্দা টাঙানো রয়েছে। তবে এখানেও নিয়মিত ক্লাস হয় না। প্রধান শিক্ষিকা শাহজাদী মানুসরা জানান, ক্লাস মাঝে মাঝে নেওয়া হয়। তবে জাতীয় সব উৎসব উপলক্ষ্যে প্রজেক্টরে শিক্ষার্থীদের ভিডিও দেখানো হয়। স্বাধীনতা দিবস, ৭ মার্চের ভাষণ, বিজয় দিবসের বিভিন্ন ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান না করার মূল কারণ হিসাবে কন্টেন্ট তৈরিতে শিক্ষকদের অনীহাকে দায়ী করছেন অভিভাবকরা। দু’একটি স্কুলে ক্লাস নেওয়া হলেও শিক্ষকরা ইউটিউব ঘেঁটে পুরোনো কন্টেন্ট দিয়ে চালিয়ে দেন। জেলা ও থানা শিক্ষা অফিস থেকে তদারকি করা হয় না। ফলে শিক্ষকরা স্বাভাবিক কাজের চাপে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নিয়ে আর ভাবেন না।
খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, নগরীর ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম সাজাতে জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এক টন করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই চাল বিক্রির অর্থ দিয়ে রুম সাজানো হয়। কিন্তু স্কুলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে-মাল্টিমিডিয়ার রুমগুলোর এলোমেলো অবস্থা। ঝুল আর মাকড়সার জালে ঢাকা পড়েছে প্রজেক্টরের মুখ। সাদা পর্দায় ময়লার আস্তর পড়েছে। প্রতি বছর ২০০ শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ বাবদ সরকারের কোটি টাকা খরচ হয়। এছাড়া মাল্টিমিডিয়ার যন্ত্রাংশ মেরামতেও টাকা ব্যয় হয়। এত খরচের পরও তদারকির অভাবে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, প্রতিটি স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছে। পাশাপাশি সব স্কুলেই মাল্টিমিডিয়া সেট রয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
এরপরও কেউ পাঠদান না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাল্টিমিডিয়ায় পাঠদান না করার বিষয়ে কয়েকটি স্কুলের নাম উল্লেখ করা হলে শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান বলেন, এমনটি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে তদারকি করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা। আমি তাদের খোঁজ নিতে বলব।