খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান শেখ নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন খুলনার চিকিৎসকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর আগে গতকাল বুধবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চিকিৎসকেরা কর্মসূচি পালন করেন। তবে দাবি আদায় না হওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় বিএমএর নির্বাহী কমিটির আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
কর্মবিরতির আওতায় খুলনা জেলার সব স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান (সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি) থাকবে। তবে হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগ খোলা আছে। এদিকে ওই চিকিৎসকের ওপর হামলা মামলার আসামি পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. নাঈমুজ্জামানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান এ নির্দেশ দেন। অভিযুক্ত নাঈমুজ্জামান সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে কর্মরত।
পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্ত পুলিশ উপপরিদর্শক নাঈমুজ্জামানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরের শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমে অস্ত্রোপচার চলা অবস্থায় চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন রোগীর স্বজনেরা। এ সময় অপারেশন থিয়েটারও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা বিএমএর পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে ওই ঘটনার বিচার দাবি করে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনার পর চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন নুসরাত আরা ময়না নামের এক নারী। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ওই মামলা রেকর্ড করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে একই থানায় নুসরাত আরা ও তার স্বামী পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. নাঈমুজ্জামানের বিরুদ্ধে মারধর ও হাসপাতাল ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএমএ। ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা শাখা ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা শাখা। আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিএমএ। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। দূরদূরান্ত থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এর আগে গতকাল রাত ৯টার দিকে খুলনা বিএমএর সভাপতি চিকিৎসক শেখ বাহারুল আলম বলেন, বিএমএ চেয়েছিল কর্মবিরতি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখতে। কিন্তু আসামিরা ওই চিকিৎসকের নামে যৌন হয়রানির মামলা করেছেন। এ কথা শোনার পর চিকিৎসক নেতারা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।