গণমাধ্যমের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন বা ওয়াচডগ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের আইনি সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেয়া ও গণমাধ্যমের অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই একটি সুরক্ষা আইন তৈরি করতে হবে।’
শনিবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার আয়োজিত সম্প্রচার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) চতুর্থ সম্প্রচার সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সাংবাদিকতার নীতি-সুরক্ষা-স্বাধীনতা’। সম্মেলনে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা সুরক্ষায় আইন করার পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। পাশাপাশি প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন যাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো হয়রানিমূলক না হয়ে সাংবাদিকবান্ধব হয়, সে বিষয়েও তারা গুরুত্বারোপ করেন।
পরে অনুষ্ঠানের দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের উদ্দেশ্য ছিল না। আইনটি সম্পর্কে যখন যে ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তখনই সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সকল সমস্যার সমাধানে গণমাধ্যমের সুরক্ষায় শিগগিরই আইন করার উদ্যোগ নেয়া হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি ব্রডকাস্টিং কমিশন অথবা এই ধরণের একটা কমিশন, যেটি হবে ওয়াচডগ। কোড অব ইথিকস প্রয়োগের জায়গা যদি বাধা আসে তাহলে সেখানে যেমন মালিকরা যেতে পারবেন, সাংবাদিক, জনগণ, সরকার- সবাই যেতে পারবে। সেই রকম একটা ওয়াচডগ সেটআপ করতে আইনি কাঠামো লাগবে। সরকারেরও একটা দায়িত্ব হবে, আমরাও যেন এমন কিছু না করি যেটা এই কোড অব ইথিকস ভঙ্গ করবে। যদি সরকারও করে তাহলে যাতে আপনারা সেই স্বাধীন কমিশনে যেতে পারেন।’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘চূড়ান্ত বিচারে মানুষ ভালো সাংবাদিকতাকে মনে রাখবে। এজন্য সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতা ঠিক রেখে সাংবাদিকতা করতে হবে। আর সেজন্যই রাষ্ট্রকেই সাংবাদিকবান্ধব আইন নিশ্চিত করতে হবে।’
অধ্যাপক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এই বাধা বলতে শুধু রাজনৈতিক বাধা বুঝলে হবে না। সম্প্রচারকর্মীদের বঞ্চনার জায়গায় পরিবর্তন হচ্ছে না। কোনো আইনি কাঠামো নেই। ফলে সুরক্ষা ব্যহত হচ্ছে।’
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, ‘সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা (এথিকস) নিয়ে কাজ করছে বিজেসি। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে, সাংবাদিকতার অবক্ষয়ের এই সময়ে যা জরুরি ছিল। নিজেদের জন্য নিজেরাই নীতি তৈরি করার এই চেষ্টাটিকে আমি যুগান্তকারী মনে করি।’
সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, ‘শ্রম আইনে সব কর্মীর যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে, তারপরেও আমরা গণমাধ্যমকর্মী আইন হবে সেই অপেক্ষা করছি। কিন্তু সেটাও হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, পৃথক আইন প্রণয়নের আগে সরকার বিদ্যমান আইনে যা আছে সেটা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবেন।’
সম্মেলনে আরও আলোচক ছিলেন বিজেসির ট্রাস্টি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ফাহিম আহমেদ, জ্যেষ্ঠ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট জহিরুল আলম, তালাত মামুন, প্রণব সাহা, জাহিদ নেওয়াজ খান, জ ই মামুন,নজরুল কবিরসহ সম্প্রচার মাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। পর্ব দুটি পরিচালনা করেন বিজেসির ট্রাস্টি নূর সাফা জুলহাজ ও মুন্নী সাহা। সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন বিজেসির চতুর্থ সম্মেলন কমিটির আহ্বায় মানস ঘোষ ও সদস্য সচিব রিজভী নেওয়াজ। পৃথক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জহিরুল আলম, শাহনাজ শারমীন ও মিল্টন আনোয়ার।