দুই সদস্য কারাবন্দি হওয়ার পর পর গা ঢাকা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আলোচিত প্রলয় গ্যাংয়ের বাকি সদস্যরা। সহপাঠীরাও তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারছে না। এদিকে তাদের হামলায় আহত অপরাধবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুন বর্তমানে বাম চোখে দেখতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জোবায়েরের সহপাঠী খালেদ মাহমুদ মিরাজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঘটনার দিন জোবায়ের বাম চোখে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন। বর্তমানে ওই চোখে সে দেখতে পারছে না।
তার আরেক সহপাঠী নিঝুম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জোবায়েরের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সে বাসায় আছে। তার বাম চোখ ফুলে বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে লাল রক্ত জমাট বেধেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। তার পরিবার ও আমরা তার চোখ নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। তার চাচা এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি তাকে দেখভাল করছেন।
গত শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায় ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়েরকে ডেকে বেদম মারধর করে প্রলয় গ্যাংয়ের ১০-১৫ জনের সদস্যদের একটি দল। এতে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় জোবায়েরের। এ ঘটনায় রোববার শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা সাদিয়া আফরোজ খান। লিখিত এ অভিযোগে জোবায়েরের মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৬-৭ জনের নাম উল্লেখ করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরে সোমবার দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহাম্মদ তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে মামলা ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রলয় গ্যাংয়ের বাকি সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। হল ও বিভাগের সহপাঠী কেউই তাদের খোঁজ দিতে পারছে না।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়া এক নম্বর আসামি। এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ, সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব, মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান, কবি জসীমউদদীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন, জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয়ের আরো ৬-৭ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযুক্তদের অনেক সহপাঠী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, ঘটনার পর অভিযুক্তদের দেখা যায়নি। হয়তো তারা গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। এদিকে একটি সূত্র জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে তবারক, ফয়সাল আহমেদ সাকিব, সাদ, নাসিফ মারামারিতে নেতৃত্ব দেন। বাকিরা মাদকাসক্ত এবং তাদের নেতৃত্বে অপরাধে জড়ায়।
এদিকে গ্যাংয়ের বাকিদের চিহ্নিত করতে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) একটি আন্তঃহল তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোববার তদন্ত কমিটির অফিসিয়ালি সভা রয়েছে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঢাবি উপাচার্য বরাবর প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে ওই কমিটির।