দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : ২৮ তারিখ সেহরির পর গভীর রাতে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উসকে দেয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহমেদ। তার মতে, বুয়েট সাংবাদিক সমিতিকে ব্যবহার করে এই কাজটি করেছে ছাত্রশিবির।পোস্টের সঙ্গে বুয়েট সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট শেয়ার করেন তন্ময়।
সোমবার (১ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ফেসবুক পোস্টে এমন দাবি করেন সাবেক এই বুয়েটিয়ান।
বুয়েট সাংবাদিক সমিতির কথা উল্লেখ করে তন্ময় লিখেন, ‘এরা কোনো প্রতিষ্ঠিত বা রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত কোনো মিডিয়ার প্রতিনিধি না।’
২৮ তারিখ রাতে সেহরির সময় তারা এই গুজব ছড়িয়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উসকে দেয়। তারা দাবি করে, বুয়েটে এসে ছাত্রলীগের নেতারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে গভীর রাতে। যেন সুবিশাল এক প্ল্যান বাস্তবায়নে নেমেছিল ছাত্রলীগ আর বুয়েটের কিছু ছাত্র।
ওই পোস্টে ‘রাতের অন্ধকারে বুয়েট ক্যাম্পাসে দলীয় প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করলো ছাত্রলীগ- সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ’ শিরোনামে একটি খবর প্রচার করা হয়।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক ব্যানারে ২৭ তারিখ দিবাগত রাত ২টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সহসভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বুয়েটের অডিটোরিয়ামের সেমিনার রুমে প্রোগ্রাম করেছে ছাত্রলীগ। তারা প্রধান ফটকের নিরাপত্তারক্ষীদের শাসিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বলেও উল্লেখ করা হয়।
নিরাপত্তারক্ষীদের বরাতে ওই পোস্টে জানানো হয়, ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে আনুমানিক ১০০-১৫০ জন ফুলের মালা, পুষ্পস্তবক নিয়ে আসে। তারা ছাত্রলীগের নবগঠিত শাখা কমিটির পদপ্রাপ্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদানের জন্য বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছিলো। উক্ত ঘটনায় বুয়েটের বর্তমান কিছু শিক্ষার্থীকেও অংশ নিতে দেখা যায়।
এই খবরটিকে গুজব দাবি করে তন্ময় লিখেন, ‘গুজবের সোর্স হিসেবে কাজ করার জন্যই শিবিরের ছেলেরা সাংবাদিক সমিতি দখল করে রাব্বিকে বহিষ্কার করে।’
গত বছরের জুলাইয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি বোট থেকে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাহিরপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধ একটি মামলাও করে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মঈন উদ্দীন, মো. ফাহাদুল ইসলাম, মো. মাহমুদুল হাসান এবং তানভীর আরাফাত ফাহিম বুয়েট সাংবাদিক সমিতির এক্সিকিউটিভ প্যানেলের বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছেন বলে ফেসবুক পোস্টে জানান তন্ময়।
তারা শিবিরের বিভিন্ন স্তরের কর্মী উল্লেখ করে তন্ময় লিখেন, ‘তবে কি বুঝার বাকি থাকে, এই আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত করায় শিবির খুব সুচারুভাবে কাজ করেছে।’
বুয়েট অথোরিটি এদের কিছু করবে না মন্তব্য করে গোয়েন্দা বাহিনী এবং পুলিশকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। তন্ময় বলেন, ‘এদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব বেরিয়ে আসবে।’
বর্তমানে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন তন্ময় আহমেদ। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের উদ্দেশ্যে দেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটে। এসময় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকের উপর প্রাণনাশী হামলা হয়। এতে অনেকেই নিহত হন। সে সময় তন্ময় আহমেদও নিশৃংস হামলার শিকার হন।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যায় সংশ্লিষ্টতা মেলে ছাত্রলীগ কর্মীদের। এরপর শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয় ছাত্ররাজনীতি। এভাবে কেটে গেছে ৪ বছর। এরই মধ্যে ২৮ মার্চ মধ্য রাত থেকে হঠাৎ উত্তপ্ত বুয়েট। ক্যাম্পাসে রাজনীতির বীজ বপনের চেষ্টা হচ্ছে এমন অভিযোগে শুক্রবার আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ। তবে আরেক পক্ষের দাবি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে বুয়েটে মৌলবাদী স্বার্থ কায়েমে ব্যস্ত হিজবুত তাহরীর ও ছাত্র শিবির।
এদিকে অপরদিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে চার বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্রলীগ। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও শিক্ষাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
এই ইস্যুতে রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশের পর নেতাকর্মীদের নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বুয়েট শহীদ মিনার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর আলটিমেটাম দেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, বুয়েট প্রশাসনের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হবে। যে নিয়ম আপনারা শুরু করেছেন সেটি কালাকানুন, সেটি কালো আইন।
এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বির বৈধ সিট ফিরিয়ে দেয়ারও আহ্বান জানান তারা।