দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : গোলাম আরিফ টিপু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শতভাগ সফল উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক, গবেষক শাহরিয়ার কবির বলেছেন, তার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, গোলাম আরিফ টিপুর মৃত্যু বাঙালি জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে প্রথম থেকেই যে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা গোটা জাতির জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোটা প্রসিকিউশনকে যেভাবে পরিচালনা করেছেন, তা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব ছিল বলে মনে করি না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করলেন, তখন অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। এ বিচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে জামায়াত-বিএনপি নানাভাবে লবিং করেছে। বিভিন্ন অপপ্রচার করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছে। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
এত এত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালের মামলা যেভাবে পরিচালনা করেছেন, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৪০ বছর পর গণহত্যার বিচার এভাবে পরিচালনা করা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বে নজির স্থাপন করেছেন। গোলাম আরিফ টিপু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে শতভাগ সফল বলে মনে করি। বিশ্বের কোনো আদালতে এমন সফলতা আছে বলে আমার জানা নেই। আমরা তা করতে পেরেছি। এদিক থেকে বিবেচনা করলে আমরা একজন সফল মানুষকে হারিয়েছি, যার শূন্যতা অন্যকেউ পূরণ করতে পারবেন না।
আমরা সবসময় তার অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবো। প্রসিকিউশনের কারো কারো বিরুদ্ধে সততা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু গোলাম আরিফ টিপু ছিলেন সততার প্রতীক। সততা, সাহস আর দক্ষতার সঙ্গে এভাবে কেউ ঝুঁকি নিয়ে থাকে না সাধারণত। তাকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার বাড়িতে বোমা হামলা করা হয়েছে। মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসবের কিছুই তিনি পরোয়া করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নির্বাচন করেছিলেন সততা এবং সাহস দেখেই।
রাজনৈতিকভাবে তিনি আওয়ামী লীগ করেননি। ছাত্রজীবনে থেকেই তিনি বামপন্থি রাজনীতি করে আসছেন। ভাষাসৈনিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। সবমিলিয়ে আমরা একজন কৃতিসন্তান হারালাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি দীর্ঘকাল অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সবার অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছেন। আমি মনে করি, জাতি তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাবে।