ঘূর্ণিঝড় রেমালে খুলনায় উপকূলের বাঁধ নিয়ে শঙ্কা - দৈনিকশিক্ষা

ঘূর্ণিঝড় রেমালে খুলনায় উপকূলের বাঁধ নিয়ে শঙ্কা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় ‘ রেমাল’ আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।  এ অবস্থায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

রোববার আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 এ কারণে খুলনার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন উপকূলের মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো জানায়, উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে মোট দুই হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।

পাউবোর কর্মকর্তাদের দাবি, উপকূলীয় ওই তিন জেলার ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অনেকটাই সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে।

এদিকে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবিলায় ৬০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন।

এ ছাড়া তিনটি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। সেখানে ৫৬০টি গবাদি পশুও রাখা যাবে বলে জানান তিনি।

পাশাপাশি কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় পাঁচ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই জেলা প্রশাসক।

এদিকে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তারিক উজ জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস হলে যে কয়টা জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, কয়রা তার মধ্যে অন্যতম। উপজেলাটি তিন দিক নদীবেষ্টিত।

“জেলা শহর খুলনা থেকে সড়কপথে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণের এ উপজেলাটিকে ঘিরে রেখেছে কপোতাক্ষ, কয়রা এবং শাকবাড়িয়া নদী আর এ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নই সুন্দরবনের সীমানায় অবস্থিত। যে কারণে ছোটখাটো দুর্যোগেও প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ে।”

এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়রা উপজেলাটির সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালি এলাকায় ১ কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় ৬০০ মিটার, ২ নম্বর কয়রা এলাকায় ৫০০ মিটার, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি-দশহালিয়া এলাকায় ২ কিলোমিটার, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে শাকবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল, তেঁতুলতলার চর ও চৌকুনি এলাকায় ৩ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

এ সব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি বাড়লে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পাউবোর খুলনার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন জানান, তারা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করে বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। কিন্তু তা অনুমোদন হতে সময় লাগে।

মশিউল বলেন, কয়রার উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে বাঁধ নির্মাণসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। সাতটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছেন। এ প্রকল্প শেষ হলে ৩২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত হবে।

তবে এলাকাবাসী বলছেন, বাঁধ নির্মাণের এ কাজে বালু সরবরাহের জন্য স্থানীয় ড্রেজার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ড্রেজার মালিকরা বাঁধের পাশের শাকবাড়িয়া নদী থেকে বালু তুলছেন। অব্যাহত বালু তোলায় সুন্দরবনে ভাঙন যেমন বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে নির্মাণাধীন বাঁধও।

৩৭ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের হড্ডা থেকে বানিয়াখালী পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫০ মিটার বাঁধ মেরামতকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন অ্যান্ড কোম্পানিকে গত মার্চে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের মেয়াদ রয়েছে। মেরামতের মাস না যেতেই ধস দেখা দিয়েছে। মেরামতকাজ করার সময় এক্সক্যাভেটর দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। সেই মাটি দিয়ে খানিকটা উঁচু করা হয়েছে বাঁধ। সেই মাটি আবার গোড়ার গর্তে ধসে পড়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিবছরই উপকূলে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। এর থেকে ক্ষতি কমাতে সরকারের বড় পরিকল্পনা দরকার।

নানা কারণে উপকূলের বাঁধগুলোর সক্ষমতা কমেছে। পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাটির কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা হারাচ্ছে, অর্থাৎ ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙন বাড়ছে, বাঁধগুলো টিকছে না বলে জানান তিনি।

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067851543426514