প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ মোকাবিলায় এরই মধ্যে উপকূলীয় বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে অনলাইনে জরুরি সভাও করেছেন। হয়েছে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভাও। জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত মোংলা, রামপাল, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপকূলীয় এই চার উপজেলায় গুমোট আবহাওয়ায় বিরাজ করতে দেখা গেছে। যেকোনো সময় ঝড়-বৃষ্টি শুরু হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বাগেরহাটের উপকূলজুড়ে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল নাগাদ কমে যায় বৃষ্টি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষকে আশ্রয় দিতে জেলার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারবে ২ লাখ ৬ হাজার মানুষ। উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে আড়াই হাজারের অধিক রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপি’র স্বেচ্ছাসেবক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত করেছে জেলা প্রশাসন। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে শুকনা খাবার। দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ টাকা ও চাল মজুত রাখা হয়েছে।
সাগর উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপদে থাকতে বলা রয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বন্দরে এক নম্বর অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মোংলা বন্দরের অবস্থান নেওয়া জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।
জেলা মৎস্যজীবী নেতা শেখ ইদ্রিস আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে জেলেরা ফিরতে শুরু করেছেন। জেলেরা আগের থেকে এখন অনেক সচেতন। তবে এই জেলেরা যখন গভীর সমুদ্রে থাকে তখন হঠাৎ দুর্যোগ আসলে তারা কোনো খবর পায় না। সাগরে মাছ ধরা জেলেদের সঙ্গে যোগাযোগের আধুনিক ব্যবস্থা করা দরকার।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী বলেন, বাগেরহাট জেলায় ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ হয়েছে। এই ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া, অন্য পোল্ডারগুলোর বেশ কিছু পয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও জিওব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। পর্যাপ্ত চাল ও নগদ অর্থ মজুত রয়েছে। জেলার সকল সাইক্লোন সেল্টারগুলো প্রস্তুত। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগণকে সরিয়ে নেওয়ার প্রচারণা শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার সাইফুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ঝড় মোকাবিলায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সভা করেছে। সভা থেকে বন্দরের সব নৌযানগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মোংলা বন্দরে এক নম্বর অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি নিয়ে ৮টি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করছে। বন্দরে থাকা জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিকভাবে চলছে। আমরা ঝড়ের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।