কোন কক্ষের দরজা ভাঙা, কোন কক্ষের টেবিল ভাঙা। আবার, কোন কক্ষের জানালা ভাঙা। এ রকম দৃশ্যই চোখে পড়বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এ এফ রহমান হলে। শুধু তা-ই নয়, দরজার ছিটকিনি থেকে শুরু করে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়া, যেন জীর্ণশীর্ণ অবস্থা হলটির। এ নিয়ে ক্ষোভ আর অভিযোগের কমতি নেই শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কক্ষগুলোতে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে বেড়িয়ে পড়েছে রড। টেবিল বাতি নেই, কোন কোন কক্ষের দরজা ভাঙা, জানালার রড নেই। ওয়াশরুম ও হলের মসজিদের অবস্থা খুবই নাজুক। ডাইনিংয়ের সিলিং ফ্যানগুলো নষ্ট । এ নিয়ে হল কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, এ এফ রহমান হলের উন্নয়ন কাজের জন্য টেন্ডার পাস হলেও কোন উন্নয়ন কাজই শুরু হয়নি। গত বছরের নভেম্বরের মাঝমাঝিতে ৩২৭ তম পরিকল্পনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (পিএনডি) সভায় এ এফ রহমান হলের টেন্ডারটি পাস হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে ও প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল। উপাচার্যের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। টেন্ডার হওয়ার পরেও কাজ করতে বিলম্ব কেন-অনুসন্ধান করতে গিয়ে হাতে কিছু নথি এসেছে।
তথ্য বলছে, গত বছরের নভেম্বরে পিএনডি সভার পর এ এফ রহমান হলের উন্নয়ন কাজের জন্য ৭২ লাখ ৫৫৬ টাকার টেন্ডার পায় জামালিয়া এন্টারপ্রাইজ। টেন্ডারের কাজ শুরু করার কথা ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে। আর কাজ শেষ করার কথা ১৫ জুন ২০২৩ তারিখে। যেখানে দুই মাস পেরিয়ে যাবার পরও কোন কাজ শুরু হয় নি। এছাড়া, হলের সামনে কাজ শুরু করার জন্য কোন ইট, বালি, রড, সিমেন্ট আনেনি জামালিয়া এন্টারপ্রাইজ।
এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজলের। কাজ শুরু হতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বারবার মৌখিক রিমাইন্ডার দিয়েছি, কিন্তু কোন লিখিতি রিমাইন্ডার দেইনি।
অথচ তথ্য বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরের ১৪ তারিখে প্রধান প্রকৌশলীর স্বাক্ষর সম্বলিত একটি রিমাইন্ডার পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, আপনাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে সময়ই কাজ শেষ করার সারমর্ম এবং অসন্তোষজনক অগ্রগতি বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে চুক্তিটি ৭ (সাত) দিনের নোটিশের সাথে বাতিল করা যেতে পারে। যেখানে নিয়োগকর্তা অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি ঠিকাদারদের খরচে কাজটি সম্পূর্ণ করার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার অধিকারী হবেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বারবার লিখিত রিমাইন্ডার দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। এছাড়া, আমাদের আগের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কাজী এস. এম. খসরুল আলম কুদ্দুসী স্যার থাকতেও যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে কাজটি দ্রুত ধরার জন্য।
জামালিয়া এন্টারপ্রাইজের পক্ষে কাজটি করছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার হেলালউদ্দিন নামে এক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। কথা বলার সময় প্রথমে জামালিয়া এন্টারপ্রাইজের সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান। তবে, কথা বলার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, জামালিয়া এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে কাজ নেয়ার কথা আছে।
এছাড়া তিনি বলেন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে কাজ চলতেছে আমার। আলাওল হলেও আমার কাজ চলমান। আমার একটু দেরি হচ্ছে। আমি আগামী সপ্তাহেই কাজ শুরু করব। কাজ শুরু করতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন কারণ নাই।
জামালিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট এস. এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা অনেকবার তাগাদা দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। তারা বারবার বলে টেন্ডার কল করছে, কাজ শুরু করেতেছে। তারা এরকমটাই বলে।
বিলম্বের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ কি এই বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কোন সাড়া মেলেনি।