চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব - দৈনিকশিক্ষা

চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মাদক গ্রহণ করলে মিলবে না চাকরি। পাওয়া যাবে না ড্রাইভিং লাইসেন্স।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হলেও মাদক থেকে থাকতে হবে দূরে। এছাড়া, চাকরিরত অবস্থায় মাদকে জড়িয়ে পড়লে করা বরখাস্ত। দেশে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।

এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা প্রস্তুত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। বিধিমালাটি চূড়ান্ত অনুমোদন হলে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকারসহ সব প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক হবে ডোপ টেস্ট।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ভয়াবহভাবে মাদকের বিস্তার হচ্ছে। কিছুদিন পর পর নতুন নতুন মাদক ঢুকছে। এতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। যার প্রভাবে পারিবারিক কলহ, চুরি, ছিনতাই এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধও বাড়ছে। এজন্য চাকরিসহ সরকারের বিভিন্ন সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

এ টেস্টের মাধ্যমে মানবদেহের জৈবিক কিছু নমুনা যেমন- মূত্র, রক্ত, চুল, ঘাম, শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস, মুখের লালা অথবা মানবদেহের যেকোনো অঙ্গ বা অঙ্গের অংশবিশেষ বা দেহ-তরলের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে মাদকের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি যাচাই করা হবে।

মাদকবিরোধী সংগঠন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। সরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে বর্তমানে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। অথচ, মাদক নির্মূলে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের সারা দেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ লাখ।

ডিএনসির তথ্যমতে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ আইনে সারা দেশে ৪১ হাজার ৭৫৯টি মামলা হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারের পাঁচটি সংস্থা অভিযান চালিয়ে ২৫ ধরনের মাদকের মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইঞ্জেকটিং ড্রাগ জব্দ করে। যার মূল্য প্রায় ১৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা।

গত বছর দেশে শুধু ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস। আগের বছর উদ্ধার হয় ৫ কোটি ৩০ লাখ পিসের বেশি। অথচ, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩২ হাজার।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর সচিবালয়ে জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, ‘সরকারি যেকোনো চাকরির জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হচ্ছে। বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। ’

গত বছরের (২০২২) ৩০ জানুয়ারি থেকে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়নে ডোপ টেস্ট সনদ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তিন মাস পর দেখা যায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন জমা দেওয়া অর্ধেকের বেশি প্রার্থী ডোপ টেস্টের জন্য বিআরটিএ থেকে তারিখ নেওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।

তবে বিধিমালা না থাকায় অন্য কোথাও ডোপ টেস্টের বিষয়টা গুরুত্ব পায়নি। আর তাই, মাদকের বিস্তার ঠেকাতে এবার চাকরিসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করতে বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক সভায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুল ওয়াহাব ভূঞা ডোপ টেস্ট-সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য শনাক্তকরণ পরীক্ষা (ডোপ টেস্ট) বিধিমালা-২০২২-এর খসড়াটি  প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে; চাকরিরত অবস্থায় কারও বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে মাদক নিয়েছেন মর্মে সন্দেহ হলে; গাড়িচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে; কর্মরত গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়েছেন মর্মে সন্দেহ হলে; উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কেউ মাদক নিয়েছে মর্মে সন্দেহ হলে; বিদেশ গমনে ইচ্ছুক কর্মীদের ক্ষেত্রে; আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে; আকাশযান বা নৌযান চালানোর লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়নের ক্ষেত্রে এবং প্রয়োজনে সরকার নির্বাহী আদেশে ডোপ টেস্টের নতুন ক্ষেত্র নির্ধারণ করতে পারবে।

জানা গেছে, বর্তমানে খসড়াটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে সীমিত পরিসরে ডোপ টেস্টের সুযোগ রয়েছে। ডোপ টেস্টের পরিধি বাড়াতে প্রাথমিকভাবে দেশের ২২ স্থানে ও পরবর্তীতে প্রতি জেলায় পরীক্ষাগার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ডিএনসি।

বিষয়টি ইতিবাচক মন্তব্য করে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডোপ টেস্টের উদ্যোগটি ভালো। চাকরির আশায় হলেও অনেকে মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকবে।

মাদক নিলে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না পায়, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে ভর্তিতে যদি ডোপ টেস্ট লাগে, তাহলে ভয়ে অনেকে মাদক থেকে দূরে থাকবে। কারণ, এতে তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন, তাদেরও অনেকে চাকরি-বাকরির জন্য রিহ্যাব সেন্টারে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হবে। তাই ডোপ টেস্ট মাদকের বিস্তার রোধে একটা কৌশল।

২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন হয়েছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। লাভ কী হয়েছে? ধূমপায়ী উল্টো বেড়েছে। এ ছাড়া মাদক নির্মূল করতে অবশ্যই সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। এখানে শর্ষের মধ্যেই ভূত আছে। অনেক রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের অনেকে এর সঙ্গে জড়িত। না হলে ৫-৭ কোটি টাকার চালান আসে কীভাবে? মাদকের গডফাদারদের তালিকাও আছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011589050292969