সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করাসহ তিন দফা দাবি নিয়ে আজ শনিবার (১০ জুন) রাজধানীতে সমাবেশ করবেন চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা। সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে ইতিমধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য শনিবার দুপুর ১২টায় শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থী সমাবেশ ও প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ৩০ ঊর্ধ্ব সার্টিফিকেট ছেঁড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আয়োজকরা জানান, এর আগেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করাসহ বিভিন্ন দাবিতে নানা সময়ে আন্দোলনের মাঠে ছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরি-প্রার্থীরা। এসব আন্দোলন ও দাবি এবং আশ্বাস পুলিশী বাধাসহ নানা কারণে ভেস্তে গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এমন ঘটনা ঘটে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, নানা সময়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও এসব আন্দোলনে হামলার অভিযোগ রয়েছে সরকার দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে।
শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে শিক্ষার্থী সমাবেশ ও প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ৩০ ঊর্ধ্ব সার্টিফিকেট ছেঁড়ার এ আয়োজনে ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছেন আয়োজকরা। শুক্রবার রাজধানীতে বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন শিক্ষার্থীরা; তারাও শনিবারের আন্দোলনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮’র পাতা ৩২ এবং শিক্ষা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও ২০১১ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স দুই বছর বৃদ্ধি করে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা হয়নি এবং চাকরি শেষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ স্বাভাবিক চাকরি প্রক্রিয়া ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাড়ায় নবীনদের জন্য। ফলে দেশে বাড়তে থাকতে বেকার এবং শিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, করোনা মহামারির সময়ে প্রায় সব প্রকার চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধ ছিল। পৃথিবীর অনেক দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর বা তার বেশি থাকা সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আরও ২-৩ বছর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। কিন্তু, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে এখন পর্যন্ত ৭১ বার সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি উত্থাপন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি।
চাকরি প্রার্থীদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর এবং অবসরে বয়সসীমা বৃদ্ধির। একই সাথে সরকারি চাকরিতে আবেদনের ফি কমিয়ে সর্বোচ্চ প্রথম শ্রেণিতে ২০০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫০ টাকা, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫০ টাকা করার দাবিও তাদের। এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধু ল’কমপ্লেক্স (বঙ্গবন্ধু চেয়ার এবং একটি ম্যুরাল) স্থাপন করার দাবিও থাকবে আগামীকালের সমাবেশে।
সমাবেশ আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা আমাদের দাবিগুলো নিয়ে কালকের এ আয়োজন করতে যাচ্ছি। সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী এবং চাকরি-প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। প্রায় তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং চাকরি-প্রার্থী আমাদের সাথে থাকার নিশ্চায়ন করেছেন। আমরা সমাবেশের জন্য পুলিশের কাছে লিখিত অনুমতি চেয়েছি। আমরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ বছর করাসহ সংশ্লিষ্ট দাবিগুলো নিয়েই এ আয়োজন করছি।