চার দফা ‘জরুরি দাবি’ পূরণে সরকারকে আরও দুই দিন সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা। তাঁরা বলছেন, চার দফা পূরণ হলেই কেবল তাঁদের মূল আট দফা দাবি নিয়ে আলোচনার পথ তৈরি হবে। কিন্তু সরকার চার দফা না মানলে আট দফা দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন সমন্বয়ক ও একজন সহসমন্বয়ক গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই ডিআরইউর সামনের সড়কে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা আবার তুলে ধরেন সমন্বয়কেরা। দাবিগুলো হচ্ছে ইন্টারনেট সচল করা, কারফিউ প্রত্যাহার করা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এসব দাবি মানতে গত রোববার রাতে সমন্বয়কেরা সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের গতকালের সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে আট দফা দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। এরপর দুই দিন আগে জরুরি চারটি দাবি জানিয়ে এসেছি। এই চারটি দাবি পূরণ না করলে বাকি আটটি দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা আবার দুই দিনের একটি আলটিমেটাম দিচ্ছি ওই চারটি জরুরি দাবি মানার জন্য। আমরা চাই, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে শুক্রবার সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে পারেন। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করব, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ওপর।’
সারজিস আলম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের যে মনোভাব এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যে ধরনের সংবেদনশীল বক্তব্য দিচ্ছেন, এগুলো আগে বললে এটা কখনোই এ পর্যন্ত আসার কথা ছিল না। অসংখ্য পরিবারের যে ক্ষতিগুলো হয়ে গেল, সেগুলো আসলে কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়।
প্রতি মুহূর্তে গ্রেফতার, তুলে নেওয়া ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ভয়ে আছেন বলেও জানান সারজিস আলম।
তাণ্ডব ও অগ্নিসংযোগে জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে মনে করেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই গ্রন্থাগারের সামনেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান তারা। তবে এর জন্য সরকারকে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
আট দফায় যা আছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেফতার ও বিচার। শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতা–মাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।