রাজশাহীর কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামার বিরুদ্ধে এবার এক কলেজছাত্রকে তুলে নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কলেজছাত্রকে আবু সামার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফোনে ওই কলেজছাত্রকে ছেড়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতা আবু সামা। ওই ছাত্র অপহরণের শিকার হলেও পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি। অভিযুক্তদেরও আটক করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতা আবু সামা ও তার ভাই শরীয়ত আলী সৈকতের বিরুদ্ধে এলাকায় জমি দখল, কার্যালয়ে আটকে রেখে জোর করে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে গত ৩ অক্টোবর গণমাধ্যমে ‘দুই ভাইয়ে তটস্থ কাটাখালীর সবাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
এবারের ভুক্তভোগী কলেজছাত্রের নাম তাইজুল ইসলাম (২১)। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম আবদুল হালিম। তাইজুল রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। আবু সামার কার্যালয়ে আটকে রাখায় সোমবার তাইজুল সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারেননি। প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা চলছে তার।
তাইজুলের খালু মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সোমবার দুপুরে পরীক্ষা দিতে অটোরিকশায় চড়ে কলেজে যাচ্ছিল তাইজুল। কাটাখালী বাজারে আবু সামা গুন্ডাবাহিনী দিয়ে তাইজুলকে অটোরিকশা থেকে জোর করে নামিয়ে তার কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রাখা হয়।’ আবু সামা ওই সময় তাইজুলকে বলেন এক মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক আছে। মেয়েটিকে এখনই বিয়ে করতে হবে। তা না হলে তাকে ছাড়া হবে না।
তাইজুলের বাবা আবদুল হালিম বলেন, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে তার ছেলের কোনো যোগাযোগ নেই। ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতেই তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছিল।’ হালিম বলেন, তার ছেলেকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে নিতে দেখে এলাকার এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে জানান। খবর পেয়ে তিনি আবু সামার কার্যালয়ে যান। গিয়ে দেখেন তার ছেলেকে মারধর করা হয়েছে। আবু সামা তাকেও আটকে রাখেন এবং জানান, ৫ লাখ টাকা দিলে তারা বাবা-ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। টাকা না দিলে এখনই ওই মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
এ সময় আবদুল হালিম রাজশাহী নগর পুলিশের মতিহার জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) একরামুল হককে ফোন করেন। এডিসি একরামুল তখন তাকে সামাকে ফোন করেন এবং তাইজুলকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে বাবা-ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আবদুল হালিম বলেন, ‘গাড়ি থেকে নামানোর পর চড়-থাপ্পড় মেরে আমার ছেলেকে জোর করে আবু সামার কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। আমার ছেলে বার বার বলেছে তার পরীক্ষা আছে। তাকে ছেড়ে দেওয়া হোক। কিন্তু আবু সামা কোনো কথা শোনেনি। পুলিশের ফোনে আমার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সে সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে পারেনি।’
হালিম আরও বলেন, ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং টাকা দাবির সঙ্গে আবু সামাসহ আরও যারা জড়িত, তিনি তাদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন। সন্ধ্যায় তার ছেলে পরীক্ষা দিয়ে ফিরলে থানায় গিয়ে মামলা করবেন।
কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের একজন সিনিয়র অফিসার ঘটনাটি জানিয়েছেন। তবে থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মতিহার জোনের এডিসি একরামুল হক বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু তুলে নিয়ে যেতে পারে না। সে জন্য খবর পেয়ে আমি বলেছি ছেলেটাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।’
অপহরণের পর ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ না যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছেলের বাবা তো তখন আমাকে এসব বলেননি। শুধু বলেছেন ছেলেটার পরীক্ষা আছে। দ্রুতই যেন তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। আমি সেটা করেছি।’
অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সামা বলেন, ‘ঘটনাটা ওরকম না। ছেলেটাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে আনা হয়নি। রাস্তার ওপরে ছেলেটা মেয়েটার সঙ্গে ঝামেলা করছিল। তাই সমাধানের জন্য অফিসে নিয়ে আসা হয়। ৫ লাখ টাকা দাবির বিষয়টিও অসত্য।’