চট্টগ্রাম নগরীতে মাদরাসার বাথরুম থেকে এক শিশু শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ৬ মাস পর এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ঘটনাটি ‘আত্মহত্যা’ উল্লেখ করে সে সময় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হলেও ময়নাতদন্তে ওই শিশুকে শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। ঘটনার দুদিন পরে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন।
গতকাল সোমবার কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানাধীন বমুবিলছড়ি এলাকা থেকে হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিদুয়ানুল হককে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবজার। মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
আজ মঙ্গলবার র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রেফতার আসামি রিদুয়ানুল শিশুটিকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন।’
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নুরুল আবজার আরও বলেন, ‘মামলাটি রুজু হওয়ার পর র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আসামির অবস্থান শনাক্তের পর তাঁকে গ্রেফতার করে। আসামিকে থানা-পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
গ্রেফতার ব্যক্তি হলেন রিদুয়ানুল হক। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। রিদুয়ানুল হক কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার চরণদ্বীপ গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে।
থানা-পুলিশ বলছে, গত ১৩ মার্চ এই মাদরাসার বাথরুমের দরজা ভেঙে সাবিব সায়ানের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। শিশুটি গলায় প্যান্টের বেল্ট দিয়ে একটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে ফাঁস লাগানো ছিল। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা ধারণা করে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে।
পরবর্তীতে মরদেহের ময়নাতদন্তে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং জোরপূর্বক শিশুটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আলামত পাওয়া যায়। এই ঘটনায় গত ১৬ মার্চ নিহতের বাবা মশিউর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে চকবাজার থানায় তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বিকেলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের বলেন, ‘এই ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হলেও পরে হত্যা মামলা হিসেবে নেয়া হয়। মামলা হওয়ার অনেক পরে ফরেনসিক রিপোর্টে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসে। যেহেতু মামলাটি এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। তদন্ত শেষে ধর্ষণের ঘটনাটি প্রতিবেদনে দাখিল করা হবে।’
ওসি আরও বলেন, ‘এই মামলায় এজাহারনামীয় তিন আসামিই মাদরাসাটির শিক্ষক। এর মধ্যে দুজনকে পুলিশ ঘটনার কিছুদিন পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি রিদুয়ানুল হককে মঙ্গলবার পুলিশ আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত রিমান্ড এখনো শুনানি করেননি।’
নিহত সাবিব দারুস ছুফফাহ তাহফিজুল কোরআন মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবা মশিউর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর দামপাড়ার ২ নম্বর পল্টন রোডে আবদুল কাদের টাওয়ারে থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলায়।