বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেছেন, সংগঠনের মধ্যে আধুনিক নেতৃত্বের যে ধারণা রয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। এ জন্য টিম ওয়ার্কের মতো করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিচালিত হবে। তাহলে তৃণমূলের কাছে দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়বদ্ধ থাকবে। আমরা মনে করি আমাদের সংগঠনকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্রলীগের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা, বর্তমান নেতৃত্বের ভিশন, মিশন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে করণীয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন ছাত্রলীগের সভাপতি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে কেমন নেতৃত্ব আসবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সাদ্দাম হোসাইন বলেন, এ জন্য আমরা হোম ওয়ার্ক শুরু করেছি। যত দ্রুত সম্ভব কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করতে চাই। তৃণমূলে যারা আমাদের নেতা-কর্মী রয়েছেন, তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে ধরনের নেতৃত্ব দরকার তাই আমরা বাস্তবায়ন করতে চাই। তিনি বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা বলেছি, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ছাত্রদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা মেটানো। আগামীর ভিশন-মিশন কী- জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, তাঁর সংগঠন স্মার্ট বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে বিজয়ী করতে চায়। সাদ্দাম বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘খুব দ্রুত গার্মেন্টস খাতকে ছাড়িয়ে যাবে আইসিটি খাত’।
এই যে অর্থনীতির রূপান্তর এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন এবং ভিশন, এটির আলোকে শিক্ষাব্যবস্থাকে রূপান্তর করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যাতে করে একুশ শতকে ছাত্র রাজনীতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির জন্য আমাদের ক্যাম্পাসগুলো যেন স্মার্টভাবে তৈরি করতে পারি, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের একটি বৃহত্তর ছাত্র ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। প্রগতিশীল সব ছাত্র ও সামাজিক সংগঠন মিলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের রায় দিতে চাই। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, অতীতে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চাম্পিয়ন হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে জঙ্গিদের লালন-পালন করেছে, সেই বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির রাজনৈতিক মৃত্যুঘণ্টা যেন আমরা বাজাতে পারি এবং নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে পারি। এটিই আগামী দিনে ছাত্র সমাজের মিশন এবং ভিশন।
ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটি গত বছরের ৩১ জুলাই রাতে কেন্দ্রে হাজারের বেশি নেতাকে পদ দিয়েছে, এবারের কমিটিতে কি সেই নেতারা ঠাঁই পাবেন? জানতে চাইলে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আমরা সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুকরণ করতে চাই। সেটি নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যে সংখ্যাগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করতে চাই। আর কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করতে চাই। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, ভালো সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল, নিবেদিত রয়েছে, যারা সাহসের সঙ্গে সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে, রাজপথে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবে তারাই নেতৃত্বে আসবে।
আমরা চাই মেধা ও সাহসের সংমিশ্রণে, বিনয় এবং লড়াকু মানসিকতার নেতৃত্ব। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গোটা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। ছাত্রলীগ এমন একটি সংগঠন, এখানে মেধাবীরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যারা সৃজনশীল চিন্তা-চেতনরা সঙ্গে যুক্ত এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে। যাদের ছাত্র আন্দোলন পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, যারা তৃণমূল থেকে নেতৃত্বে এসেছে। শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন বাস্তবায়নের জন্য যে নেতৃত্ব প্রয়োজন, তেমন নেতৃত্ব কিন্তু আমাদের মাঝে আছে। তাদের নিয়েই আমরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠন করব। ছাত্রলীগে নারী নেত্রীর সংখ্যা বাড়ানো হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় নারী নেতৃত্বে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি নারী-পুরুষের সমতার সমাজ নির্মাণ করতে চান। তাঁর কারণেই নারীরা আজ এগিয়ে যাচ্ছেন। সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। রাজনৈতিকভাবে নারীদের ক্ষমতায়নে বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীতে শেখ হাসিনা আইকন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সেটিকে ধারণ করবে এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই নারীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে অনেক নারী প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই কিন্তু যোগ্য ছিলেন। তাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আগামীতে নারীরা নেতৃত্বে আসবে। তাদের জন্য সেই পরিবেশ কিন্তু তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ভালো সংগঠন বেছে নেওয়া। যারা সংগঠনের প্রতি কমিটেট। লিঙ্গ পরিচয়ে কেউ যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সামনে রেখে তরুণ ভোটারদের টানার জন্য ছাত্রলীগের করণীয় কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে নতুন জীবন উপহার দিয়েছেন। কারণ বিগত দিনে আমরা এমন সরকার দেখেছি, যারা এক দিনে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ করেছে, দুর্নীতিতে দেশকে পাঁচবার চাম্পিয়ন করেছে, বিরোধী দলের নেতাদের ওপর হামলা করেছে। অথচ বর্তমানে এমন একটি সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে, যারা এক দিনে ১০০ সড়ক, ১০০ সেতু নির্মাণ করতে পারে। এক দিনে ১ কোটি ডোজ টিকা প্রদান বাস্তবায়ন করতে পারে। বাংলাদেশকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে, রপ্তানি আয় বেড়েছে, বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বই পাচ্ছে, মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে নিয়োগ পাচ্ছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন