দৈনিক শিক্ষাডটকম, কিশোরগঞ্জ: শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ ইকরামের (২০) র্যাগিংয়ের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। বুধবার (১ মে) দুপুরে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে এক সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত ফয়সাল আহমেদ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রেজোয়ানুল ইসলাম (স্বনন) ও হৃদয় কান্তি বিশ্বাস তীর্থ সাংগঠনিক সম্পাদক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এছাড়া অভিযুক্ত ওই মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জয়, শাফীন, তাহের ও লিমন এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফি, সৌরভ পাল, নাফিজ, অনিমেষ, তাবিব, অনিক ও শাওন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওই মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোবারক মিয়া, মারুফ, সাদিত, অভীক ও হাসান।
লিখিত বক্তব্যে ফয়সাল আহমেদ, স্বনন ও তীর্থ বলেন, গত ২৪ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে ফয়সাল আহমেদ ইকরাম ছাত্রাবাস থেকে বের হয়ে যায় এবং সারারাত বাইরে থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে। ফয়সাল ভোরে তার ৩০১ কক্ষে এসে নক করে এবং দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় তারই রুমমেট সৌরভ পালের ওপর ক্ষীপ্ত হয় এবং আক্রমণাত্বক আচরণ করে এবং গালিগালাজ করে। এ রকম ঘটনা সে এর আগেও বহুবার করেছে। সৌরভ পাল আমাদের বিষয়টি জানালে সমাধানের জন্য দ্রুত তৃতীয় তলায় যায়। কারণ এর আগেও ফয়সাল আহমেদ ইকরাম তারই ব্যাচমেট রাফিকে মারধর করেছিলো। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো না হয় সেই জন্য তৃতীয় তলায় গিয়ে সকাল ৬টার দিকে ফয়সালের কক্ষে প্রবেশ করি। প্রবেশ করার পর আমরা ইকরামের রুমমেট মাহাদী ও মুস্তাফিজকে বাহিরে যেতে বলি কারণ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘটনাটি সৌরভ এবং ফয়সালের মাঝেই সমাধান হউক।
তারা বলেন, একপর্যায়ে সৌরভ পালকে ভেতরে আসতে বলি তাদের দুজনের সমস্যা সমাধান করার জন্য। কিন্তু ফয়সাল সৌরভ পালকে দেখে আবারও ক্ষীপ্ত হয়ে যায়। ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমরা সৌরভ পালকে বেরিয়ে যেতে বলি এবং পুনরায় ফয়সালের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করি। কিন্তু ফয়সালের উগ্র আচরণ দেখে আমরা ৩০১ নম্বর রুম থেকে নিজেদের মান-সম্মান রক্ষার্থে বের হয়ে চলে যাই।
কারণ ফয়সালের ভাষ্য ছিল, সে তার মতই চলবে, তার মতই থাকবে। সে লোকাল, সে কাউকে মানবে না এবং হোস্টেলের নিয়ম-কানুন এবং শিক্ষকদের কোন তোয়াক্কা সে করে না। বের হয়ে যাওয়ার সময় আমরা ইকরামের ব্যাচমেটদের বলে আসি যে, তোমাদের ব্যাচের সমস্যা তোমরা নিজেদের মাঝে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করো। যদি না পারো তবে অধ্যক্ষ স্যার এবং শিক্ষকবৃন্দ এবং তার পরিবাবরকে অবহিত কর। এ কথা বলে তৃতীয় তলা থেকে চলে আসি। আমরা ফয়সালের রুমে মাত্র কয়েক মিনিট অবস্থান করি, যা সিসিটিভি ফুটেজেও দৃশ্যমান। এ সময় মারধরের কোন রকম ঘটনা ঘটেনি। কোন প্রকার গালিগালাজের ঘটনাও ঘটেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এরপর বেলা ১১টা ৩০মি. থেকে ১২টা ৩০মি. এর মাঝে ফয়সাল একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করে ও ১২টা ৪০ মিনিটে গিয়ে নাটকের শেষ পার্ট হিসেবে ইমারজেন্সীতে গিয়ে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ড এ ভর্তি হয়। যেহেতু ফয়সাল ইতোপূর্বেও শিক্ষকবৃন্দ, সিনিয়র এবং ব্যাচমেটদের সাথে খুবই বাজে আরচণ করে আসছিল, শিক্ষকবৃন্দ ও তার পরিবারকে তার আচরণ সম্পর্কে অবহিত করার কথা শুনে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সে মিথ্যা এবং বানোয়াট অপবাদ দিয়ে এক নাটকীয় ঘটনা রচনা করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফয়সাল অভিযোগ করে যে, তাকে প্রায় ৩০ মিনিট যাবৎ প্রায় ২০ জন মিলে মারধর করে। এক্ষেত্রে তার বক্তব্য এই যে, তার সোল্ডার ডিজলোকেশন হয়েছে। কিন্তু ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ও অর্থোপেডিক্স স্যারের এক্সামিনেশনে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি যা হাসপাতালের ভর্তির কাগজে উল্লিখিত আছে।
ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল, স্বনন ও তীর্থ আরও বলেন, ফয়সাল আহমেদ ইকরামের বিবৃতি অনুযায়ী তার ডান সোল্ডার ডিজলোকেশন হয়ে যায় এবং ১০ মিনিট যাবৎ শারীরিকভাবে অত্যাচারের স্বীকার হয়। কিন্তু সে হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, তার ডান সোল্ডার ডিজলোকেশন হয়নি এবং শারীরিকভাবে সে সম্পূর্ণ সুস্থ যা মেডিক্যাল রিপোর্টে উল্লিখিত রয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে এটি প্রমাণিত হয় যে, তার রুমে আমরা মাত্র ২ মিনিটের মত অবস্থান করে। গত ২৪ এপ্রিল সকাল ৬টা ১১ মিনিটে ফয়সাল তার রুম ৩০১ থেকে বেরিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। এ সময় ফয়সালের চলাচলে কোন ধরণের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়নি এবং সে ডান হাতে ফোন নিয়ে কথা বলছিলো যা সিসি টিভি ফুটেজে স্পষ্ট। মেডিক্যাল সাইন্স মতে, কোনো ব্যক্তির সোল্ডার ডিজলোকেশন হলে তার হাত নাড়ানো সম্ভব না। তাই তার সোল্ডার ডিসলোকেশনের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সকাল ৮টা ৩২ মিনিটে ফয়সালকে নিচতলায় স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে দেখা যায় যা সিসি টিভি ফুটেজে স্পষ্ট। সকাল ৯টা ৯ মিনিটে সে ক্লাস করার জন্য কাধে ব্যাগ নিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এটিও সিসি টিভি ফুটেজে দৃশ্যমান এবং যথারীতি সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ক্লাসে অংশগ্রহণ করে।
তারা আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক, কারণ ভর্তির সময় ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার তার গায়ে কোন ধরনের মারামারির চিহ্নের খোঁজ পাননি। মেডিসিনের ডাক্তাররাও তাকে পরীক্ষা করে কোন ধরনের মারামারির চিহ্ন খোঁজে পাননি। এমনকি মাসকুলোস্ক্যালিটাল সিস্টেম এক্সামিনেশন করেও কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। এই সব কিছুর লিগ্যাল ডকুমেন্ট রয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ এবং তার ভর্তির কাগজগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে তার পুরো ঘটনাটিই একটি সাজানো নাটক। তার সোল্ডার ডিজলোকেশন এবং তাকে মারধরের কাহিনি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। বিএনপি ও জামাত শিবিরের কতিপয় নেতাকর্মীর ইন্ধনে ফয়সাল আহমেদের এ জঘন্যতম নাটক ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ও তার হেয় স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে নির্মিত। বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে স্যারদের মধ্যে থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফয়সাল আহমেদ ইকরাম বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য। আমি মিথ্যার আশ্রয় নেইনি।
এ বিষয়ে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আশুতোষ সাহা রায়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।