পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামে গত শুক্রবার রাতে নিখোঁজ হয়েছে এক শিশু (১২)। দুদিনেও সন্ধান মেলেনি তার। তবে নিখোঁজের পরদিন একটি পুকুরপাড় থেকে তার পায়ের জুতা এবং বিলের মাঝ থেকে গায়ের ওড়না পেয়েছে পুলিশ। এই আলামত পাওয়ার পর শিশুটির পরিবারের দাবি- তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এরপর লাশ গুম করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শিশু নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আল আমিন (৩৫) নামের এক অটোরিকশা চালককে আটক করা হয়। প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে সে শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে লাশ ফেলে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে সোমবার সকাল পর্যন্ত ওই নদীতে অভিযান চালিয়েও শিশুর লাশ উদ্ধার করা যায়নি।
জানা গেছে, নিখোঁজ শিশুর বাড়ি চরআন্ডা গ্রামে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের চরআন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দুই বছর পড়ালেখা থেকে বিরত ছিল সে।
নিখোঁজ শিশুর পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের সাগরপাড় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়েছিল সে।
কাঁচা মরিচ, শেম্পুসহ অন্যান্য সদাই নিয়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনাও দিয়েছিল। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ হয়।
স্থানীয়রা জানায়, ওই শিশু নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর শনিবার দুপুরে চরআন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে তার পায়ের একটি জুতা আর বাজার থেকে কেনা সদাই এবং খাল সংলগ্ন বিলের মাঝে পাওয়া যায় ওড়না। উদ্ধার হওয়া ওই ওড়নায় প্রচুর লালা দেখতে পেয়েছেন তারা। এতেই ধর্ষণ-খুন আর গুমের সন্দেহ হয় শিশুর পরিবার ও এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা আরও জানায়, শিশুটি যেখান থেকে নিখোঁজ হয় সেখানেই দীর্ঘক্ষণ অটো পড়ে ছিল স্থানীয় আল আমিনের। তাই অটোচালক আল আমিনকে সন্দেহ হয় সবার। শনিবার বিকেল থেকে তাকে খুঁজতে শুরু করে স্থানীয় লোকজন। সেসময় তিনি পলাতক ছিল। পরে রাত ২টার দিকে আলেকান্দা গ্রাম থেকে আল আমিনকে (৩৫) স্থানীয়রা ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আটক আল আমিন চরআন্ডা গ্রামের ইসমাঈল হাওলাদারের ছেলে।
এদিকে, শিশু খুন করার বিষয়টি স্বীকার করা আটো চালক আল আমিনের ফাঁসির দাবিতে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় চরআন্ডা সাগরপাড় বাজারে প্রথম মানববন্ধন করা হয়। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে চরআন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। বিদ্যালয় মাঠেও একটি মানববন্ধন হয়। এসব কর্মসূচিতে শিশুটির পরিবার, এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
নিখোঁজ লামিয়ার বাবা বলেন, ‘আমি সাগরে ছিলাম। মেয়ে নিখোঁজের কথা শুনে আমি বাড়ি আসি। এসে ওড়না পেয়েছি। এরপর খোঁজ খবর নিয়ে জানি-আল আমিন ধর্ষণ করে হত্যা করছে। তারপর গাঙে (নদীতে) ফালাইয়া দিছে। আমরা আল আমিনের ফাঁসি চাই।’ মামি বলেন, 'ওই শিশুকে পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করতো আল আমিন।’ মামাতো ভাই বলেন, ‘লাশ আমরা এখনও পাই নাই। আমরা আল আমিনের ফাঁসি চাই। ওর সাথে যারা জড়িত আছে তাদেরও ফাঁসি চাই।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘শিশু নিখোঁজের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আল আমিন নামের এক অটো চালককে আটক করা হয়েছে। তিনি প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে শিশুটিকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে রোববার রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশুটির লাশ উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নদী বড় হওয়ায় এখনও লাশ উদ্ধার করা যায়নি।’