ক্যাম্পাসে এক ছাত্রের ‘রহস্যজনক’মৃত্যুর ঘটনার পর তীব্র সমালোচনার মধ্যেই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আসছে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
বুধবার (২৩ আগস্ট) এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ।
অথচ ইউজিসির কঠোর নির্দেশ অমান্য করেই গত এক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা নেই।
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে এক ছাত্র নিহত হন। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় সেই ছাত্র কীভাবে মারা গেলেন, তিনি খুন হয়েছেন কিনা, কে বা কারা খুন করেছেন - এসব প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
এরপরই সচেতন মহলে প্রশ্ন ওঠে, আধুনিক যুগেও এতো নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়টি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নেই কেন? ক্যাম্পাসে কোনো অপরাধ ঘটলে তার দায় কার?
এ নিয়ে চলে জোর চর্চা। এরইমধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ এলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ জানিয়েছেন, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেসব স্থানে পরীক্ষামূলক সিসিটিভি বসানো হবে। আপাতত ক্যামেরা বসবে হোস্টেলের সামনে। তারপর ধাপে ধাপে অন্যান্য জায়গায় ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এজন্য ওয়েবেল (WEBEL) কে টেন্ডার জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
তবে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে সিসিটিভির আওতায় আনতে সময় লাগবে বলে জানালেন তিনি। উপাচার্য বলেন, ‘সব কিছু তো আর চুটকিতে হয় না। এতদিন তো যা যা হয়ে এসেছে, এখন আমি এসে একটা চুটকি মারব, আর সব ঠিক হয়ে যাবে, তা তো নয়। এখন দেখতে হবে সবটাই। সময় লাগবে। ’
এদিকে ছাত্রের মৃত্যুর পরও ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্তে রাজি নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যামেরা বসানোর বিপক্ষে সরব তারা।
তাদের এই দাবি, কোনোভাবেই সমর্থন করছেন না মৃতের পরিবার। মৃত ছাত্রের মামা বলেন, ‘ নয়দিন হয়ে গেল, এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগাতে পারল না, কেন পারছে না? আজ যদি সিসিটিভি থাকত, তাহলে আমার ভাগ্নেকে যারা খুন করেছে, তা জানা যেত। কেনই বা এর বিরোধিতা করা হচ্ছে?’
মৃতের বাবা হতাশার সুরে বলেন, সিসিটিভি থাকলে বোধ হয় এভাবে ছেলেটার প্রাণ যেত না!
ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্তে একমত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিও।
গত ১৪ আগস্ট বৈঠকেও তারা জানান, ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
গত শনিবার ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবিতে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধিরা। প্রতীকী সিসি ক্যামেরা নিয়ে মিছিলও করে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনটি।
গত ৯ আগস্ট মাঝরাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন হোস্টেল’-এর তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় মাত্র তিন আগে যোগ দেওয়া ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর। তবে মৃতের পরিবারের অভিযোগ, র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে খুন হয়েছে তাদের ছেলে। তারা মামলাও দায়ের করেন।
এরইমধ্যে অভিযোগ ওঠে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের নামে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এই অপরাধে যুক্ত।
তবে হোস্টেলে কোনো সিসি ক্যামেরা না থাকায় ওই ছাত্রের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন এসব অভিযোগের কোনোটিরই কূলকিনারা করতে পারছে না পুলিশ।