স্বতন্ত্র পরিদপ্তর-নিয়োগসহ ৬ দফা দাবিতে রাজধানীর মহাখালীর সড়ক অবরোধ করেছেন মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসির শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসকের বিপরীতে অন্তত একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টের পদায়ন ও দ্রুততম সময়ে পদ সৃষ্টি করে নতুন নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে এই শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মহাখালী থেকে লিংক রোড, বনানী, ফার্মগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ যানজট।
আজ (সোমবার) বেলা ১১টার দিকে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সামনে বৈষম্য বিরোধী মেডিক্যাল টেকনোলজি ও ফার্মেসি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ১১টার দিকে অধিদপ্তরের সামনের সড়কে তারা অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন নার্স ও ৫ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় প্রশাসনিক জটিলতায় মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা মাত্র ৪ হাজার ১০৬ জন, এগুলোর বিপরীতে মোট পদের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৭৫টি। তবে চিকিৎসক ও নার্সের বিদ্যমান সংখ্যার অনুপাতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ৮০ হাজারেরও বেশি।
তারা বলেন, নিয়োগ জটিলতা শেষ হয়ে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ আগস্ট নতুন সৃষ্ট পদে ৮৮৯ জনকে নিয়োগ দেয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই নগণ্য। দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় একটি বৃহৎ অংশের সরকারি চাকরিতে আবেদন বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। নিজস্ব কোনো দপ্তর না থাকায় এ দক্ষ অথচ বেকার জনগোষ্ঠী এক প্রকার হতাশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে। তাই আমরা আর ঘরে বসে থাকতে চাই না। এবার দাবি পূরণ করেই ঘরে ফিরতে চাই।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে তীব্র যানজট দেখা দেওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা গেছে যাত্রীদের মধ্যে। নাসিম আহমেদ নামে এক যাত্রী বলেন, অফিসের কাজে মিরপুর যেতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে এক জায়গায় এক ঘণ্টা যাবৎ বসে আছি, কতক্ষণ তাদের আন্দোলন চলবে জানি না। এভাবে কিছু একটা হলেই সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন আর মেনে নেওয়া যায় না।
নাদিয়া হাসান নামে আরেক যাত্রী বলেন, বাংলাদেশটা এখন দাবি আদায়ের দেশ হয়ে গেছে। এটা মগের মুল্লুক নাকি? দুনিয়ার সব দাবি নিয়ে প্রতিদিনই সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সরকার যদি দাবি মেনে নেয়, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। অন্যথায় শক্তভাবে তাদের প্রতিহত করা দরকার। কিন্তু পাশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকলেও কেউ কিছুই বলছে না।
মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো— স্বতন্ত্র পরিদপ্তর গঠন করতে হবে, ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণির গেজেটেড) পদমর্যাদা প্রদান করে ডব্লিউএইচও-এর আনুপাতিক হারে পদ সৃষ্টি করে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের স্থগিতকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নবম গ্রেডের পদ সৃষ্টি পূর্বক চাকরিজীবীদের আনুপাতিক হারে পদোন্নতির নিয়ম বহাল রেখে স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ নিয়োগবিধি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ঢাকা আইএইচটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে একটা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব আইএইচটিতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার প্ল্যান গঠন করে বিদ্যমান নিয়োগ বিধি ও অসংগতিপূর্ণ গ্রেড সংশোধন করতে হবে। মেডিক্যাল টেকনোলজি কাউন্সিল ও ডিপ্লোমা মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ড গঠন এবং প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বি ফার্মসহ সব অনুষদের বিএসসি ও এমএসসি কোর্স চালু করা এবং স্কলারশিপসহ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু করতে হবে।
দাবি প্রসঙ্গে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন বলেন, চিকিৎসক-নার্সদের দাবিদাওয়া পূরণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নার্সিং অধিদপ্তর থাকলেও স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা উভয় বিভাগের অধীনস্থ মেডিক্যাল টেকনোলজি শিক্ষা এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পেশাজীবীদের পেশাগত লক্ষ্য বাস্তবায়ন, বদলি, পদোন্নতি, উচ্চ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, সমন্বয়ের জন্য কোনো স্বতন্ত্র উইং, পরিদপ্তর কিংবা অধিদপ্তর নেই। আমরা এই বৈষম্যের কারণে পেশাগত দিক থেকে পিছিয়ে আছি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কেবলমাত্র পেশাদার চিকিৎসকদের সামগ্রিক সুবিধা আদায়ের একটি প্রশাসনিক ইউনিটে পরিণত হয়েছে। এর যাবতীয় সুবিধা, পদ-পদবি, পদোন্নতিসহ সামগ্রিক দিক থেকে কেবলমাত্র চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণে ও তাদেরই প্রদানের জন্য রাখা হয়েছে। নীতিনির্ধারণী সকল জায়গায় অন্য স্টেকহোল্ডারদের কোনো প্রকার অংশগ্রহণ না থাকা এবং একপেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বাকি সব জনবলকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু বণ্টনে সকলের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ এবং ন্যায্য বিষয়।