ছয় মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক। প্রতি মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পান তাঁরা। সেটাও বন্ধ রয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। শিক্ষকদের বেশির ভাগই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের জীবনযাপন।
জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) মহা. বশিরুল আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবহিত আছি। প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের জন্য অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সম্মতি মিলেছে। আশা করছি ঈদের আগেই শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান করা হবে।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। সারা দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে মসজিদের নিকটবর্তী শিশুদের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাক্-প্রাথমিক ও কোরআন শিক্ষা দেওয়াই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়া রোধ করাও আছে লক্ষ্যের মধ্যে। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমের ইতিমধ্যে ছয়টি পর্যায় শেষে সপ্তম পর্যায় চলমান রয়েছে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ৭৩ হাজার ৭৬৮টি কেন্দ্রের একজন করে শিক্ষক, ২ হাজার ৫০ মডেল কেয়ারটেকার, ৬৫ কর্মীসহ মোট ৭৫ হাজার ৮৮৩ জন জনবল রয়েছেন। তাঁদের সবাই গত সেপ্টেম্বর থেকে কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। প্রতিটি সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে ৩০ জন এবং সহজ কোরআন শিক্ষাকেন্দ্রে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ১ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বেতন-ভাতা চলমান না থাকায় শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার উত্তর সোহেলপুর খলিল হুজুরের মক্তব কেন্দ্রের শিক্ষক মাওলানা মোজাম্মেল বলেন, ‘সাত মাস ধরে বেতন-ভাতা নাই। কেন্দ্র চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় এক কাজির সহকারী হিসেবে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। জানি না, কবে বেতন-ভাতা পাব।
সামনে রোজা-ঈদ। সরকার কত টাকা কতভাবে খরচ করছে। আর আমরা সামান্য কিছু সম্মানী পাই, তা-ও সাত মাস ধরে বন্ধ!’মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহা. আবুল হোসাইন বলেন, ‘ছয় মাস ধরে আমরা কেউ বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এই বাজারে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন শিক্ষকেরা। সামনে পবিত্র রমজান আসছে, অথচ আমাদের বেতনের খবর নাই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’
তবে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. নায়েব আলী গতকাল বলেন, ‘প্রকল্পটি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সময়মতো অর্থ ছাড় না হওয়ায় কয়েক মাসের সম্মানী-ভাতা বাকি রয়েছে। কিছু কিছু জেলায় দুই মাসের ভাতা দেওয়া হয়েছে। শুনেছি অর্থ বিভাগ অর্থ ছাড়ে সম্মতি দিয়েছে। আশা করছি ঈদের আগেই সব শিক্ষকের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।’