আমাদের বার্তা ডেস্ক: বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ইংরেজ সরকারের একজন ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন। বসু পরিবারের আদি নিবাস ছিলো ঢাকা জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল নামক গ্রামে।
জগদীশচন্দ্রের প্রাথমিক শিক্ষার সূত্রপাত হয় ফরিদপুর জেলার একটি গ্রাম্য বিদ্যালয়ে। তার এগারো বৎসর বয়সে বসু পরিবার কলকাতায় চলে যায়। সেখানে তিনি প্রথমে হেয়ার স্কুলে, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে অধ্যয়ন করেন। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করেন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময়েই তার ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত রচিত হয়। রেভারেন্ড ফাদার লাফোন্ট এর উৎসাহে তিনি পদার্থ বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। লাফোন্টের উদ্যোগে তাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ইংল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তবে প্রথমে তিনি এক বৎসর চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ডাক্তারি পড়া বাদ দিয়ে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপজ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। প্রায় একই সময়ে ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।
ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর জগদীশচন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। এখানেই তার শিক্ষক এবং যথার্থ অনুসন্ধানী গবেষকের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জীবনের সূত্রপাত ঘটে। জগদীশচন্দ্র ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্যাপকভাবে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। বিদ্যুৎতরঙ্গের আলোকধর্মী প্রবণতার মধ্যে প্রতিফলন, প্রতিসরণ, সর্বমোট প্রতিফলন, সমবর্তী বিচ্ছুরণ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি গবেষণা পরিচালনা করেন। আকাশ-তরঙ্গ ও বৈদ্যুতিক চুম্বক তরঙ্গের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে জগদীশচন্দ্র বেতার বার্তার সূত্র আবিষ্কার করেন। বিনাতারে শব্দ প্রেরণের ‘ক্রিস্ট্যাল রিসিভার’ নামক যে বেতার যন্ত্রটি তিনি আবিষ্কার করেন তার সাহায্যে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত তার বাসভবনে সাংকেতিক শব্দ প্রেরণ করতে সক্ষম হন।এ ছাড়া তিনি নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে অদৃশ্য-আলোকেও দৃশ্য-আলোকের সকল ধর্ম বর্তমান।
জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি এমিরিটাস প্রফেসর পদ লাভ করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে উদ্ভিদ-শরীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এখানে উদ্ভিদ ও কৃষি রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এবং নৃতত্ত্ব বিষয়ে গবেষণার জন্য উল্লিখিত বিষয়সমূহের বিভাগ খোলা হয়। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র আমৃত্যু এখানে গবেষণাকার্য পরিচালনা করেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এ বিজ্ঞানী তার সুদীর্ঘ কর্মময় জীবন শেষে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের গিরিডিতে মৃত্যুবরণ করেন।