জবিতে অনুমোদন ছাড়াই একাধিক যানবাহন ক্রয় - দৈনিকশিক্ষা

জবিতে অনুমোদন ছাড়াই একাধিক যানবাহন ক্রয়

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

হরিলুট চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ২০১৯-২০ অর্থবছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কর্তৃপক্ষ ১১টি বাস ও ২টি মাইক্রোবাস কিনেছে। যানবাহন কেনার আগে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা না মেনে নিজেরাই এ যানবাহন কিনেছে। যেসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ নেই, সেসব পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সম্মানী-ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি অনুমোদিত কোনো অর্গানোগ্রামও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট পর্যালোচনার সময়ে এ ধরনের ২৫টি অনিয়ম পেয়েছে  বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ।

ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে দ্বিতীয় গ্রেডে বেতন দেওয়ায় জাতীয় বেতন স্কেলের ব্যত্যয় ঘটেছে এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী তৃতীয় গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন না। তাই রেজিস্ট্রারের বেতন পুনর্নির্ধারণ করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির দেওয়া বাজেট বরাদ্দ থেকে খাতে খাতে কমবেশি করে আন্তঃখাত সমন্বয় করা হয়েছে। অথচ সরকারি আদেশ ও বাজেট পরিপত্র অনুযায়ী, এক খাতের অর্থ অন্য খাতে হস্তান্তর বা সমন্বয়ের সুযোগ নেই। এ ছাড়া সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের আগেই কিছু খাতে মূল বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে বেশি ব্যয় করে নিয়মের ব্যত্যয় করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চুক্তিভিত্তিক ড্রাইভার, তবলা সংগতকারী, বাস হেলপার নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ সরকার ও কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, এসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুযোগ নেই। আবার অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে সিনিয়র ড্রাইভার, সিনিয়র গার্ড নামে পদ আপগ্রেডেশন করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগকৃত জনবলের পুলিশ ভেরিফিকেশন না করেও নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে। এ ছাড়া জগন্নাথের একাধিক শিক্ষককে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী, অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দিতে হলে অর্থ বিভাগের পরিপত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ ইউজিসিতে পাঠাতে হবে। কমিশনের অনুমোদন পেলে এই অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দেওয়া যাবে।

ইউজিসি বলছে, সরকারি বিধি অনুযায়ী অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি দায়িত্বের জন্য সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া যায়। অথচ তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাতা দিয়ে সরকারি বিধি লঙ্ঘন ও আর্থিক ক্ষতি করছে। একইভাবে বই ভাতার ক্ষেত্রেও শিক্ষকপ্রতি বছরে ১ হাজার ২০০ টাকা দেওয়ার বিধান রয়েছে। অথচ তারা দিচ্ছে বছরে ৩ হাজার টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরে কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই দুটি মাইক্রোবাস ও একটি বাস কিনেছে। একই অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও তারা ১০টি বাস কিনেছে। ইউজিসি দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে এ কেনাকাটার অর্থ আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে ফেরত দিতে সুপারিশ করেছে। তারা ড্রাইভার ও হেলপারদের তদারকি ভাতা দিয়েও সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু যানবাহন ভাড়ায়চালিত। অথচ কমিশন থেকে এর জন্য কোনো প্রশাসনিক ও আর্থিক অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পে-স্লিপের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্লিপ তৈরি করেন না এবং তাতে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষর ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প লাগানো হয় না। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অসমন্বিত অগ্রিম দেওয়ার পরিমাণ ১ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। ইউজিসি জরুরি ভিত্তিতে ওই টাকা সমন্বয়ের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। একই সঙ্গে জুন মাসে কোনোরূপ অগ্রিম দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধিকার ভাতা সরকারি হারের চেয়ে বেশি। শিক্ষকদের টোফেল, আইইএলটিএস, জিআরই পরীক্ষার ফি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিশোধ করা হয়, যা পুরোপুরিই নিয়মের লঙ্ঘন। অনুষ্ঠান উৎসব খাত থেকে জাতীয় দিবস ছাড়া বিভিন্ন দিবসে অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বাজেট সেল নেই। অথচ এ সেল খুবই দরকারি বলে মনে করছে কমিশন।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপাচার্য দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তরের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও ব্যক্তিগত শাখার কর্মকর্তাদের নিয়মবহির্ভূতভাবে সম্মানী দিয়ে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মন্ত্রণালয় অনুমোদিত অভিন্ন শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নীতিমালা থাকলেও তা তারা মানছে না। নীতিমালার বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণকালীন ৬০০ টাকা হারে দৈনিক মজুরি বিল দিয়েছে, যা নিয়মে নেই। প্রশিক্ষণে একই ব্যক্তিকে অতিথি ও অংশগ্রহণকারী দেখিয়ে উভয় ক্ষেত্রে সম্মানী দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পিআরএল ও পেনশনের ক্ষেত্রেও তারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘দ্বিতীয় গ্রেড দেওয়া হয়েছে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস ও রেজল্যুশন ফলো করেই দেওয়া হয়েছে। আমার জানামতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারও দ্বিতীয় গ্রেড পান।’ অন্যান্য নিয়মের ব্যত্যয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একেকটা কাজ একেকটা বিভাগ করে থাকে। তাই এসব ব্যাপারে বিস্তারিত না জেনে বলা যাচ্ছে না।’

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038270950317383