জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সহকর্মীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। ওই কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দফতরের উপ-পরিচালক হিমাদ্রী শেখর মন্ডল। ভুক্তভোগী মাসুদা আক্তার একই দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত।
গত বুধবার (১ নভেম্বর) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাসুদা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ভুক্তভোগী মাসুদা আক্তার ‘পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কর্স দফতরে’ গত বছর যোগদান করলেও চলতি বছরের ২ অক্টোবর পর্যন্ত দফতরে তার বসার ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি দফতরের উপ-পরিচালক নায়লার অধীনে গেস্ট চেয়ারে দীর্ঘ এক বছর অফিস করেছেন। নায়লা ইয়াসমিন ২৬ অক্টোবর ছুটি নিয়ে কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন। এই আগেই তিনি রেজিস্ট্রারের মৌখিক অনুমতি নিয়ে তার রুমে মাসুদা আক্তার ও সোনিয়া দিলশাদ সানোয়ারাকে বসার ব্যবস্থা করে দেন।
কিন্তু গত ২৮ অক্টোবর সকালে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর সৈয়দ আলী আহমেদ অফিসে ঢুকেই অনেক জোরে বকাবকি শুরু করেন এবং উপ-পরিচালক নায়লা সম্পর্কে বাজেভাবে গালিগালাজ করেন। যদিও প্রজেক্ট ডিরেক্টর সৈয়দ আলী আহমেদ বর্তমানে তার নামে বরাদ্দ করা রুম আর প্ল্যানিং ডিরেক্টরের জন্য বরাদ্দ পাওয়া দু’টি রুম নিয়েই অফিস করছেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ৩০ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে ভুক্তভোগী তার চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় এই দফতরের উপ-পরিচালক হিমাদ্রী শেখর মন্ডল তার সাথে একই দফতরের সেকশন অফিসার কামরুজ্জামান রাসেলকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। এরপরই তিনি ভুক্তভোগীকে জোর করে রুম দখল নিয়েছেন কি না জানতে চান। ওই দিন দুপুরের মধ্যেই এই টেবিল যেন বাইরে বের করার হুমকি দেন। এমনকি তাকে মারতেও উদ্যত হন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়।
হিমাদ্রী শেখর মন্ডল ভুক্তভোগী মাসুদা আক্তারের সঙ্গে ফোনে কয়েকদিন অসৎ উদ্দেশে অরুচিকর কথাবার্তাও বলেছেন। উদ্দেশ্য সফল না হওয়াও হেনস্তা করার একটি কারণ বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাসুদা আক্তার বলেন, ‘এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সময় আমি রুমে একা থাকায় অসম্ভব ভয় পেয়ে প্রক্টর স্যারকে তখনই অবহিত করি এবং প্রক্টর স্যার দু’জন সহকারী প্রক্টরকে পাঠান। আমি, নায়লা ম্যাডাম ও সোনিয়াসহ স্যারদের পুরো দফতর ঘুরে দেখাই এবং সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করি। আমার অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগও দিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হিমাদ্রী শেখর মন্ডল বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং মাসুদা আক্তারই আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করেছেন।’
মোবাইল ফোনে অসৎ উদ্দেশ্যে অরুচিকর কথাবার্তা বলার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।
পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপতরের পরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ বলেন, ‘মাসুদা আক্তারের সঙ্গে আমার সাথে ছোট একটা বিষয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু তাকে দফতর থেকে বের হয়ে যেতে বলেছি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। হিমাদ্রি শেখরের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে বলে পরে শুনেছি। এর থেকে বেশি কিছু আমি জানি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাসুদা আক্তার নামের ওই কর্মকর্তা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, এখন রেজিস্ট্রার, ট্রেজারার ও উপাচার্য স্যার ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’