ফেনীর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির তহবিলে জমানো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী তিনশতাধিক শিক্ষকের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না। প্রায় আট বছর ধরে এসব শিক্ষক ও তাদের পরিবার সমিতির নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির প্রবীণ নেতাদের টাকাও আটকে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জেলার প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষক ও তাদের পরিবার সঞ্চয়ের টাকা পেতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এসব শিক্ষকের অনেকে অবসর কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে পরপাড়ে পাড়ি জমিয়েছেন। এসময়ে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক সমিতির ফান্ডে জমানো টাকা পেলেও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের পরে অবসর কিংবা মৃত্যুবরণকারীদের কেউ তা ফেরত পাননি। ফলে ভুক্তভোগীরা সঞ্চয়ের টাকা পাওয়া নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। শিক্ষকদের অনেকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ছাড়াও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিতেও টাকা জমিয়েছিলেন। ওইসব শিক্ষকরা দুটি ফান্ডের কোনোটির টাকাই পাননি।
জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের এলাহীগঞ্জ মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আলী হায়দার এখনো টাকা পাননি। তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অবসরগ্রহণ করেন।
সোনাগাজীর আমিরবাদ বিসি লাহা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেব শিক্ষক আবুল খায়ের চার বছর আগে অবসরে যান। এখন গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। শিক্ষক নেতাদের দ্বারস্থ হয়ে চাকরিজীবনের সঞ্চয়ের টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্যরা।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা যান লস্করহাট এসসি লাহা ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক মোহাম্মদ ইউছুফ। তার চিকিৎসা বাবদ পরিবারের খরচ হয়েছে ১২ লক্ষাধিক টাকা। স্বজনরা জানিয়েছেন, জীবদ্দশায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন মোহাম্মদ ইউছুফ। সমিতি অফিসে নেতাদের পিছে মাসের পর মাস ঘুরেও তার কর্মজীবনের সঞ্চয়ের টাকা পায়নি পরিবার। কবে নাগাদ এই টাকা পাবেন এ বিষয়েও সমিতির কর্তাব্যক্তিরা সদুত্তর দিচ্ছেন না।
পশ্চিম বিজয়সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নবী মজুমদার ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুন মারা যান। তার স্ত্রী মোর্শেদা আক্তার স্বামীর সঞ্চয়ের টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ও কালিদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, অবসরপ্রাপ্ত, মৃত্যুবরণকারী শিক্ষকদের তালিকা করতে উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্তরা যেহেতু পেনশন পান না, সেহেতু তাদের প্রাপ্য টাকা পেলে ভালো থাকতে পারবেন। অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সমিতির সাধারণ সম্পাদক চেকে সই না করায় শিক্ষকদের টাকা ফেরত দেয়া যাচ্ছে না।
ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফকির আহম্মদ ফয়েজ বলেন, শিক্ষকদের টাকা ফেরত দিতে আমরা চেষ্টা করছি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিটিংয়ে এমনকী অফিসেও আসেন না। তার সই ছাড়া ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তার কারণে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী শিক্ষকদের পরিবার ভোগান্তিতে আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা লজ্জিত।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলীর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। এখন তাকে পাওয়া যাবে কী না সেটাও অনিশ্চিত। তাছাড়া সমিতির কিছু টাকা উত্তোলন করে তার কাছে রেখেছি। এই টাকার হিসাবও তিনি দেননি।
ফেনী জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলীর বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করলে তিনি অসুস্থ বলে জানান। সুস্থ হয়ে ফিরলে বিষয়টির সুন্দর সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।