দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত অন্যতম। পবিত্র কোরআনের বহু স্থানে নামাজের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। জাকাত দাতার মনকে ধনসম্পদের প্রতি লোভ থেকে মুক্ত ও পবিত্র করে। কাকে জাকাত দেওয়া যায় এবং কাকে দেওয়া যায় না, এ ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোরআনে বলা হয়েছে যে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কর্মী, নও মুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে জাকাত দিতে হবে।
কাকে জাকাত দেবেন
সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী যারা জাকাত পাওয়ার উপযোগী, তারা হলেন:
এক. ফকির বা অভাবগ্রস্ত। যার বেচে থাকার মতো সম্বল নেই বা খুব সামান্য।
দুই. মিসকিন বা নিঃস্ব। মিসকিন বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যার মালিকানায় কোনো ধরনের সম্পদ নেই।
তিন. আমেল তথা জাকাতের অর্থ সংগ্রহকারী। ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আমেল বলা হয়। তাদের সংগৃহীত জাকাতের সম্পদ থেকে বিনিময় দেওয়া বৈধ। তবে বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কমিশন হারে জাকাত থেকে বিনিময় দেওয়া কোনোভাবেই শরিয়তসম্মত নয়।
চার. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম।
পাঁচ. গোলাম বা দাস মুক্তির জন্য জাকাত দেওয়া। বর্তমানে এই খাতও বিদ্যমান নেই।
ছয়. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। কোনো ব্যক্তি এই পরিমাণ ঋণগ্রস্ত হলে তাকে জাকাত দেওয়া যাবে, যার ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না।
সাত. আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান আল্লাহর পথে আছে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ না থাকলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম ও ইমামের মতে, ‘আল্লাহর রাস্তা’ বলতে এখানে আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে।
আট. বিপদগ্রস্ত মুসাফির। কোনো ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে বাড়িতে পৌঁছার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জাকাত হিসেবে দেওয়া যাবে।
কাকে জাকাত দেবেন না
এক. কাফির।
দুই. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের নাবালক সন্তান।
চার. বনু হাশেমের লোক।
পাঁচ. মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি—একইভাবে যত ওপরের স্তরের দিকের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে দুনিয়ায় এসেছে, তাদেরসহ ওপরের স্তরের কাউকে জাকাত দেওয়া যাবে না।
ছয়. নিজের মাধ্যমে যারা দুনিয়ায় এসেছে, অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে ও তাদের সন্তানাদি একইভাবে তাদের সন্তানদের জাকাত দেওয়া যাবে না।
সাত. স্ত্রী ও স্বামী একে অন্যকে জাকাত দিতে পারবে না।
আট. মসজিদ-মাদরাসা, পুল, রাস্তা, হাসপাতাল বানানোর কাজে ও মৃতের দাফনের কাজে জাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৮৮, ১৮৯; তাতারখানিয়া : ৩/২০৬; আদদুররুল মুখতার :৩/২৯৪, ২৯৫)
সহোদর ভাই-বোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামি যেহেতু উসুল বা ফুরু—অর্থাৎ জাকাতদাতার মূল বা শাখা নয়। তাই তাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা জাকাত গ্রহণের উপযোগী হয়। এমনিভাবে জাকাতের টাকা দিয়ে কাপড় কিনে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হিদায়া : ১/২০৬, বাদায়ে : ২/৪৯)
সূত্র : দেশ রূপান্তর