সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য দূর করে সতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন নামের একটি শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। একইসঙ্গে তারা সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাসহ সব বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারিভাবে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা এবং জাতীয়করণের আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসবভাতা, সম্মানজনক বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আর জাতীয়করণের দাবিতে চলমান শিক্ষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ও এর অন্তর্ভুক্ত ৯ টি শিক্ষক পরিষদ।
রোববার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে সংগঠনটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান শিক্ষক নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম। লিখিত বক্তব্যে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ও এর অন্তর্ভুক্ত ৯ টি শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে কয়েকদফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য দূর এবং সতন্ত্র বেতন কাঠামো চালু করা, সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাসহ সব বেসরকারি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা, সব ধর্মাবলম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা এবং জাতীয়করণ হওয়ার আগে পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের শতভাগ উৎসব ভাতা, সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা দেয়া।
পরে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এম কুরবান আলী বলেন, শিক্ষক জাতির আলোকবর্তিকা ও ভবিষ্যত মানবজাতির রুপকার হলেও বাংলাদেশে শিক্ষকেরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে আদর্শ জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে দু'টি শিক্ষাধারা বেসরকারি শিক্ষা হিসেবে চালু আছে। একদিকে সাধারণ শিক্ষা তথা স্কুল-কলেজ অপরদিকে আলিয়াসহ মাদরাসা শিক্ষা। উভয় শিক্ষা আজও উপেক্ষিত। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে আন্দোলন চলছে। শিক্ষকদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়াটাই ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, দাবি মানা তো দূরের কথা উল্টো তাদেরকে হামলা করে আহত করা হয়েছে। আবার যারা সরাসরি মাঠে আন্দোলন করছে এবং শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলছে তাদেরকেও নানা হুমকি দেয়া হচ্ছে। যার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নূরুন্নবী মানিক, বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মনজুরুল হক, বাংলাদেশ ইবতেদায়ি শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সবুর মাতুব্বর, অধ্যাপক আ জ ম কামাল উদ্দিন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, অধ্যক্ষ নাজির আহমদ, অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন, অধ্যক্ষ ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা শিক্ষকদের ওপর হামলা ও হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বীকৃতি ও উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।