জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময় গত ১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনের অভ্যন্তরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, বহিরাগত, পুলিশের সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ দায়েরের সাত দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ।
এর আগে, গত সপ্তাহের শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর অভিযোগ করেন। ১৫ জুলাই রাতে তিনি উপাচার্যের বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছিলেন। কোনো আশানুরূপ অগ্রগতি দেখতে না পেয়ে তিনি গত শুক্রবার থানায় গিয়ে পুনরায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগপত্রে বাদী উল্লেখ করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ওইদিন সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত হই। সেখানে রাতে তিনিসহ অর্ধশত শিক্ষার্থীর ওপর শিক্ষক ও প্রশাসনের সরাসরি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্তৃক বর্বর হামলা চালানো হয়।
উক্ত ঘটনায় সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক বশির আহমেদ, সাবেক প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইখতিয়ার উদ্দিন ভূইয়া, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল আহমেদ রঙ্গন, সহকারী রেজিস্টার (শিক্ষা) রাজিব চক্রবর্তী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাহিদুর রহমান খান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্রলীগ নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পরে বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০-১৫০ জন শিক্ষার্থী ওই রাতেই ভিসি বাসভবনের সামনে উপস্থিত হই। সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎকালীন প্রশাসনিক দায়িত্বরত এবং এই মামলার কতিপয় আসামি বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। সবার কথা না শুনে তাদের হলে চলে যেতে বলেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা শ্লেগান
দেয়া শুরু করলে ১৬ জুলাই রাতে সোহেল ও লিটনের নেতৃত্বে মেহেদী ইকবাল, ইসরাফিল আহমেদ, রাজিব চক্রবর্তী, নাহিদুর রহমান ও সুদীপ্ত শাহীনের উপস্থিতিতে ছাত্রদের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা করা হয়। এ হামলায় বাদীসহ অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে জখম হয় এবং আহত হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।মামলা গ্রহণ করার ব্যাপারে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দীক বলেন, আমরা অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করেছি। এখানে কিছু প্রাথমিক তদন্তের ব্যাপার আছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলা হিসেবে গ্রহণ করা যায় কি না আমরা দেখবো।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, মামলা অবশ্যই নিতে হবে। ১৫ থেকে ১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগরে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় অবিলম্বে মামলা নিতে হবে।