দৈনিকশিক্ষাডটকম, জাবি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রাধ্যক্ষের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অফিসে তালা দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস ও হল অফিসসূত্রে জানা যায়, আল-বেরুনী হলে পেশ ইমাম, অফিস সহকারী ও নিরাপত্তাকর্মী পদে তিনজনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। একজন অফিস সহকারী ও একজন নিরাপত্তাকর্মী পদের বিপরীতে যথাক্রমে ১৯ ও ১৫ জন চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন। গতকাল দেড়টায় নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহকারী পদে নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাৎকার ছিল। অনিবার্য কারণবশত উল্লেখ করে বেলা ২টার দিকে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অফিসে তালা দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর তারা চার দফা দাবিতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকার নাইনের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে সাড়ে ৮টার দিকে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রদের সঙ্গে হলে গেলে কক্ষে তালা ঝোলানো দেখতে পান।
প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আনীত শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো হলো, বিভিন্ন কাগজ সাইন করানোর জন্য প্রাধ্যক্ষকে নিয়মিত পাওয়া যায় না, মশার উপদ্রব কমানোর জন্য হলের পুকুর পরিষ্কারের কথা বারবার বলা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি, হল নির্মাণের কাজ অর্ধেক বাকি থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, হলের সামনে রাস্তার সংস্কারকাজে গাফলতি।
তবে হল নিয়মিত না দেখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জুলকার নাইন। বাকি অভিযোগগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পুকুর পরিষ্কারের বিষয়ে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে। হলের বাকি কাজগুলো নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি।’
সংশ্লিষ্ট হল সূত্রে জানা যায়, অফিস সহকারী ও নিরাপত্তাকর্মী পদে প্রাধ্যক্ষ তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে চান। এ জন্য প্রার্থীদের দুজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে হল প্রশাসন। অপরদিকে পেশ ইমাম নিয়োগে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে মরিয়া হল ছাত্রলীগ। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পেশ ইমাম নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় হল প্রশাসন। ছাত্রলীগ তাদের পছন্দের প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগের জন্য টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে।
সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর পেশ ইমাম নিয়োগ সামনে রেখে ছাত্রলীগ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহকারী পদে নিজেদের প্রার্থীকে নিয়োগের দাবি জানায়। এ ছাড়া পেশ ইমাম পদে প্রাধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করে। এ বিষয় নিয়ে হল প্রশাসন ও হল ছাত্রলীগের মাঝে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রলীগের দেওয়া প্রস্তাব না মানায় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনাম, নাহিদ ও যুগ্ম সম্পাদক চিন্ময় সরকারের নেতৃত্বে হল অফিসে তালা দেয় হলের নেতাকর্মীরা।
নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও আল-বেরুনী হল ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, ‘নিয়োগ ও নিয়োগে লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ বা অন্য কারোর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হলের সামনে জটলা দেখি। নিচে এসে জানতে পারি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রাধ্যক্ষের অফিসে তালা দিয়েছে। দাবিগুলো দীর্ঘদিনের। ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলোর সঙ্গে একমত। শিক্ষার্থীরা হল অফিসে আরও আগেই তালা দিত। আমরা তাদের বুঝিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন এত দিনেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি।’
নিয়োগ-বাণিজ্যের ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জুলকার নাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চাইছিল অফিস সহকারী পদে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাকে তাদের পছন্দমতো হতে হবে। সবকিছুর তো একটা প্রক্রিয়া আছে। বললেই তো আর একজনকে নিয়োগ দেওয়া যায় না। টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’