জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষক পদ ডাউনগ্রেড (উচ্চ পদ থেকে নিচে নিয়ে আসা) করার জন্য আবেদনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি এনেছেন ওই বিভাগের ১০ জন শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে গত ৪ বছরে অবসর, অকালমৃত্যু ও চাকরি ছেড়ে দেয়াজনিত কারণে যথাক্রমে ১টি সহকারী অধ্যাপক, ১টি সহযোগী অধ্যাপক ও ১টি প্রভাষকের পদ শূন্য হয়েছে। শূন্য সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে সরাসরি নিয়োগ না দিয়ে পদ দুটি ডাউনগ্রেড করে ওই ২টি পদে প্রভাষকের পদ সৃষ্টির জন্য বিভাগের সভাপতি আবেদন করেছেন। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ বিধি অনুসরণ করে করা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ও সংবিধি অনুযায়ী কোনো বিভাগে শিক্ষক পদ সৃষ্টি বা গঠন বা পরিবর্তন কিংবা রূপান্তর অর্থাৎ প্রবর্তন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পর্ষদের সুপারিশ লাগে। সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কিন্তু ওই বিভাগের সভাপতি শিক্ষক পদ ডাউনগ্রেড করার জন্য তা অনুসরণ না করে সরাসরি সিন্ডিকেটে সুপারিশের জন্য রেজিস্ট্রারের কার্যবিবরণীতে যুক্ত করতে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ওই বিভাগের অধ্যাপক রোরহান উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের বিভাগের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পর্যায়ে গবেষণা ও অধ্যয়ন করে বিখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন। তারা যদি বিভাগে জয়েন করতে চান, তাদের তো প্রভাষক পদে নেয়া শোভন হয় না। অনেক বিভাগেই সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক কিংবা অধ্যাপকের অনেক পদ খালি রাখা হয়, যেন সেসব পদে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। সেখানে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই স্ব স্ব পদে নিয়োগ না দিয়ে ডাউনগ্রেড করে শুধু প্রভাষক নিয়োগের পাঁয়তারা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা বিভাগের ১০ জন শিক্ষক লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অধ্যাদেশের ২৩ (২) ধারায় সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও কর্তব্য সম্পর্কে বলা আছে। ওই ধারার কোথাও শিক্ষক পদ ডাউনগ্রেড করার কথা বলা নেই। বরং ২৩ (২) ধারার ‘ট’ উপধারায় বলা আছে, সংবিধিবলী ও শিক্ষা পরিষদের সুপারিশ অনুসারে সিন্ডিকেট অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক কিংবা অন্য যে কোনো শিক্ষকতার পদ প্রবর্তন করবে বা করতে পারে। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক কিংবা অন্য যে কোনো শিক্ষকতার পদ তৈরিতে সিন্ডিকেট সুপারিশ নেবে শিক্ষা পর্ষদ থেকে।
এ ব্যাপারে ওই বিভাগের সভাপতি ফারহা মতিন জুলিয়ানা গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের বিভাগে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে কোনো প্রভাষক নিয়োগ হচ্ছে না। বিভাগের বিভিন্ন কাজের জন্য জুনিয়র শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে, কারণ সিনিয়র শিক্ষক দিয়ে সব কাজ করানো যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম মেনেই রেজিস্ট্রার বরাবর পদ ডাউনগ্রেড করে প্রভাষক পদ সৃষ্টির জন্য আবেদন করেছি।
প্রচলিত নিয়ম মানতে গিয়ে বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে এইরকম প্র্যাক্টিসই চলছে। এখানে যদি বিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যেটা সিদ্ধান্ত দেয়, সেটাই হবে। তবে ইতোপূর্বে এই নিয়মে পদ ডাউনগ্রেড করার জন্য বিভিন্ন বিভাগও কাজ করেছে। তারা সফলও হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির ২৫৪তম সাধারণ সভার খসড়া কার্যবরণীর সফট কপি পাওয়ার পর সভাপতিকে কার্যবিবরণী সংশোধন করতে বিভাগের ১০ জন শিক্ষক লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু বিভাগের সভাপতি দীর্ঘদিনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়ার রীতি ভেঙে যথাযথ সংশোধন বা পরিমার্জন ছাড়া কার্যবিবরণী নিশ্চিত না করে তড়িঘড়ি করে পরের দিন ২৪ আগস্ট অনুষদে না পাঠিয়ে রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ওই বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, বিভাগীয় সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এবং সংবিধি লঙ্ঘন করেছেন। যদিও বিভাগে কর্মরত ২২ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিগত ৪ বছরে কখনো কোনো অসুবিধায় পড়তে হয়নি বা শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হননি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, শিক্ষক পদ ডাউনগ্রেডের জন্য শিক্ষা পর্ষদের কোনো সুপারিশ লাগে না। সিন্ডিকেট সরাসরি এখানে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।