জয়পুরহাটের কালাইয়ে জাল সনদে আয়া পদে চাকরি করছেন মাহবুবা বেগম। এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করলে তার জাল সনদের তথ্য বের হয়ে আসে। এদিকে মাহবুবাকে ৮ম শ্রেণি পাসের সনদ না দেয়ায় মাদরাসার সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওই মাদরাসার সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। সনদ না দেয়া হলে সুপারকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চেয়ে সুপার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত আবেদন করেছেন।
মাহবুবা খাতুন ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই সমশিরা উচ্চবিদ্যালয়ে আয়া পদে চাকরি পান। তিনি রাঘবপুর চৌমুহনী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ দিয়ে চাকরিটি পান। চলতি বছরের ৭ জুন এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস মাহবুবার কাগজপত্র যাচাই করে দেখে তার অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদটি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পিয়ারাপুর আইজিএম স্কুল অ্যান্ড কলেজের। নিয়োগ ও এমপিওভূক্তির আবেদনে আলাদা সনদ হওয়ায় সন্দেহ হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের। তিনি গত ১৩ জুন সনদ যাচাই করতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে রেকর্ড বইয়ে মাহবুবার কোন তথ্য পাননি।
এদিকে জাল সনদের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আয়া মাহবুবাকে মাদরাসার সভাপতি চলতি বছরের জুলাই মাসে অষ্টম শ্রেণি পাসের সনদ দিতে বলেন সুপারকে। এতে রাজি না হওয়ায় ১ আগস্ট কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করে চিঠি পাঠান সভাপতি।
মাহবুবা বেগম বলেন, আবেদনের সময় কোন প্রতিষ্ঠানের সনদ দেয়া হয়েছে তা আমার স্বামী ভাল জানে। আমি এসবের কিছুই জানিনা। তবে মাহবুবার স্বামী মাবুদ হোসেন বলেন, এত কিছু বলতে পারবো না। চাকরি না হলে না হবে।
সুপার আব্দুল আলীম বলেন, ‘মাদরাসার রেকর্ডে না থাকলেও মাহবুবাকে অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ দেইনি। এ কারণে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সনদ না দিলে চাকরি থেকে অপসারণ করবে বলে হুমকি দেন সভাপতি। এ ঘটনার তদন্ত চেয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন দিয়েছি। প্রয়োজনে সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা করব।’
মাদরাসার সভাপতি ও উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান মণ্ডল বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে বাধ্য নই। যা লিখার লিখতে পারেন।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান বলেন, নিয়োগের সময়ের সনদ আর এমপিওভূক্তির আবেদনের সনদ আলাদা এবং ভুয়া। তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এমপিওভূক্তির আবেদন নাকচ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি বলেন, তদন্তে সনদ দুটি ভুয়া, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুপারের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।