শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু আজ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু আজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদানের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ছাড়াই আজ রবিবার থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হচ্ছে। সবমিলিয়ে অর্থ সংকট, সমন্বয়নহীনতা ও কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে সারাদেশের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ ‘নামকাওয়াস্তে’ ৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘অর্থ সাশ্রয়ের’ লক্ষ্যে অনলাইনে সারাদেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কিন্ত কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, যথাযথ প্রস্ততির ঘাটতি, যথাসময়ে শিক্ষকদের অবহিত না করা, ইন্টারনেটের ধীরগতি ও সময় বিভ্রাটের কারণে এক লাখের মতো শিক্ষক ‘নামকাওয়াস্তে’ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। বাকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয়নি। সবমিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকরা কিভাবে পাঠদান করাবেন তা নিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ গত ১৭ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ‘অর্থের যোগান’ না হওয়ায় সেটি হয়নি। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর এই প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা ছিল, তা-ও হয়নি। এরপর ২৭ ডিসেম্বর অনলাইনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কিন্ত বেশিরভাগই শিক্ষকই এদিন প্রশিক্ষণের সময়সূচি জানতে পারেননি।

জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, মাস্টার ট্রেইনারদের (প্রশিক্ষক) প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এই মাস্টার ট্রেইনাররা আবার উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা ১ জানুয়ারির আগেই সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ চেয়েছিলাম। এমনকী ক্লাস শুরু করার আগেই এটা চেয়েছিলাম। মোট ৬ দিনের প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষকরা। এখন এটি জানুয়ারিতে

শুরু হচ্ছে। সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি উপজেলা পর্যায়ে সরাসরি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এরপর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু করবেন শিক্ষকরা।

এনসিটিবি ও মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘সেসিপ’ প্রকল্প থেকে এই টাকার বরাদ্দ দেয়ার কথা ছিল। কিন্ত মাউশি, প্রকল্প কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির গাফিলতির কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই অর্থ বরাদ্দের ‘সম্মতি’ পেতে বিলম্ব হয়। এ কারণে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ‘তালগোল’ পাকিয়ে যায়।

জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা জানান, তার জেলায় ৬ জানুয়ারি থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হবে। প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষকরা ৫ দিন করে প্রশিক্ষণ পাবেন।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে মোট ১০টি করে বই থাকছে। এগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে সময় স্বল্পতার কারণে এখনই সব বিষয়ের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নেয়া হবে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানান।

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা এক বছরের বেশি সময় নিয়ে বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করেছেন। এসব বই ‘সাধারণ শিক্ষকদের’ পক্ষে ৫/৭ দিনের প্রশিক্ষণে আয়ত্ত্ব করা কঠিন। এত তাড়াহুড়ো করে নতুন শিক্ষাক্রম এবার চালু না করলেই ভালো হতো বলে ওই শিক্ষকরা মনে করেন।

জানতে চাইলে নরসিংদীর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম কুমার মিত্র বলেন, তিনি নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার দায়িত্বে আছেন। এই তিন জেলায় ২৭ ডিসেম্বর থেকে ‘মাস্টার ট্রেইনার’দের ৫ দিনের প্রশিক্ষণ চলছে। তাদের মোট ৪ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্ত প্রস্ততির ঘাটতির কারণে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবার নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন স্থগিত রাখা হয়েছে। এরপর ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।

২০১২ সালে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। এর আগে ১৯৯৫ ও ১৯৭৬ সালে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। সরকার ২০১০ সালে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ প্রণয়ন করলেও এর অনেক কিছুই বাস্তবায়নের বাকি রয়েছে।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033190250396729