নিয়মের তোয়াক্কা না করে টাকার লোভে শিক্ষার্থীদের ঘনঘন পরীক্ষার নেয়ার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বৈদ্যের বাজার নেকবর আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেন। স্থানীয়রা বলছেন, স্কুল বছরে অর্ধবার্ষিকী ও বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের চারটি পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষা বাবদ প্রতি শিক্ষার্থীর ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা ফি আদায় করেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়া সাপ্তাহিক পরীক্ষার জন্য প্রতি শিক্ষার্থীকে ফি বাবদ গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা করে। এ পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে লিখিত অভিযোগ করে এর প্রতিকার দাবি করেছেন। একইসঙ্গে তারা প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড সনদ নিয়ে তিনি শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
এদিকে প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেননি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, নিয়ম বহির্ভুতভাবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা আয়োজন করার প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে জবাব দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতেই নয় অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অনুযায়ী বছরে দুটি পরীক্ষা নেয়ার কথা থাকলেও তিনি বছরে চারটি পরীক্ষা নেন। এছাড়া সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক পরীক্ষাও নেন। যেখানে সাধারণ পরীক্ষায় ১৫-২০ টাকা এবং সাপ্তাহিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৮-১০ টাকা খরচ হয়। সেখানে যার ফি বিভিন্ন শ্রেণিতে জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করেন। এছাড়া সাপ্তাহিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী প্রতি ফি চাপিয়েছেন ৫০ টাকা। এছাড়া করোনা মহামারিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুরো বছরের বেতন ও অ্যাসাইনমেন্ট ফি আলাদা আলাদাভাবে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
মো. লোকমান হোসেন নামের এক স্থানীয়র অভিযোগ, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড ডিগ্রি নিয়েছেন। সনদ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের কারণে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে আদালতের নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের পর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের দেয়া সব সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়। সেই দিক বিবেচনায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের যেই সনদ সেটি অবৈধ। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড ডিগ্রি থাকার কারণে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নিয়োগ পাওয়ার ২ বছরে একাধিকবার এমপিও এর জন্য আবেদন করে এমপিওভুক্ত হতে পারে নি। পরবর্তীতে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অফিসারদের ম্যানেজ করে এমপিও করান বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বৈদ্যের বাজার নেকবর আলী মুন্সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামাল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরীক্ষার নেয়ার বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। তবে, কি সমাধান হলো জানতে চাইলে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি প্রধান শিক্ষক।
বিএড সনদের বিষয়ে জানতে চাইলেও সুস্পষ্ট কোনো জবাব তিনি দেননি। ‘নামাজে আছি’ জানিয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দেন তিনি।
জানতে চাইলে শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধিদপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষা আয়োজন করায় তাকে শোকজ করা হয়েছে। তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন।
বিএড সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশের পর তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়েছেন। উনার সনদ ঠিক আছে।