'আমার আব্বা ভ্যান চালক, প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গেছিলাম কিছু টাকা কম নিতে। তিনি বললেন, কম নেয়ার কোন সুযোগ নেই। আমি বললাম, দেখেন স্যার যদি কোন সুযোগ থাকে কিছু টাকা কম নিলে আমি পরীক্ষা দিতে পারতাম। জবাবে স্যার বললেন, বেশি কথা বললে টাকা আরো বাড়বে, টাকা দিতে না পারলে পড়ালেখা ছেড়ে দাও।’
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের এমন কথা শুনে কষ্ট আর হতাশা নিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির কারিগরি শাখার একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. মাইনউদ্দিন (১৭)। তার কথাগুলো মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে আরেকজন।
ভিডিও গতকাল রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। মাইন উদ্দিন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চর আলগী গ্রামের ভ্যানচালক মো. লাল মিয়ার ছেলে।
রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন। মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমাদের কলেজের কারিগরি শাখার প্রথম বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে বেতন ও পরীক্ষার ফি বাবদ আমার ৪ হাজার ১০০ টাকা দেয়ার কথা জানানো হয়। আমার আব্বা একজন ভ্যানচালক। দিন আনে দিন খায়। আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বলি-স্যার কিছু টাকা কম নেন, আমার আব্বা গরীব মানুষ। তিনি (অধ্যক্ষ) বললেন, টাকা কম নেওয়ার সুযোগ নেই। টাকা দিতে না পারলে পড়ালেখা ছেড়ে দাও। পরে উপায় না পেয়ে এলাকার এক বড় ভাইকে নিয়ে যাই। তিনি কলেজের অন্য কয়েকজন স্যারকে কিছু টাকা কম নেয়ার সুপারিশ করলেও তারা তা মানেননি।
মাইনউদ্দিন আরো বলেন ,আমার পরীক্ষার জন্য আব্বা একজনের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, আরেকজনের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। আর আমাদের ঘরে থাকা কিছু টাকা লাগিয়ে মোট ৩ হাজার টাকা দেন আমার পরীক্ষার জন্য। তিন হাজার টাকা নিয়ে স্যারের কাছে গেলেও তিনি এক টাকা কম হলেও পরীক্ষা দিতে দেবেন না সাফ বলে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সব পরীক্ষার্থীদেরকেই কম-বেশি বেতন মওকুফ করা হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ কমিটির সভাপতি মোসা. হাফিজা জেসমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেয়া হয়েছে।