একটানা ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রায় সব নিচু এলাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবে রাতে ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরী। কোথাও কোথাও জমে গেছে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। বৃষ্টিপাতের সঙ্গে জোয়ারর পানি যোগ হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর সাড়ে ১২টা) থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
জলাবদ্ধতায় পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন দোকানপাট ও মসজিদেও। নগরীর বাদুরতলা এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় চাকলাদার জামে মসজিদের মাইক থেকে শুক্রবারের জুমার নামাজ বাসায় পড়ে নিতে এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পানি এখন সড়কে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। মূলত ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে না পেরে অনেক ঘর ও দোকানপাটের ভেতর পানি ঢুকে গেছে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা। তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই এসব এলাকার নদীবন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকা মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, বহদ্দারহাট, ডিসি রোড, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, প্রবর্তক মোড় ডুবে গেছে।
এছাড়া আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরীর নিচু এলাকার সড়কগুলোতে হাঁটুপানি উঠেছে জোয়ারের সময়। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকার অনেক সড়কে পানি জমে থাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
বাসায় পানি ঢুকে যাওয়ায় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। জ্বলছে না চুলা। বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিজে গেছে বেশকিছু পণ্য।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এর ব্যয় বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা করা হয়।
নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির কাজ করা হয় এই প্রকল্পের অধীনে। বাকি ২১টি খালে পানি যাওয়ার পথ নেই। এসব খাল এবং ৫৯টি পয়েন্টের ব্রিজ, কালভার্টে বিদ্যুৎ, ওয়াসা ও গ্যাসের লাইনে ময়লা জমে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।