চলন্ত ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ৩ দফা দাবিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে ৩ দফা দাবি না মানলে রেলভবন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় ঢাবি শিক্ষার্থী ইফতি শাহরিয়ার রাইয়ান বলেন, শিবলী ট্রেনে একজন টিকিটধারী যাত্রী ছিলেন। সহযাত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জেরে তাকে যে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া হয়, সেই সময় গাড়িভর্তি সহযাত্রী ছিলেন। এমন পরিস্থিতিতেও ট্রেন থামানো হয়নি। তাছাড়া ট্রেনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীরও (আরএনবি) বেশ গাফলতি রয়েছে, কেনো না তারা তাদের ট্রেনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ পুরো ঘটনাটা কী রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়নি? আমার মনে হয় রেলওয়ে দায়সারাভাবে এটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
আরেক শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান কাঞ্চন বলেন, ঘটনাটি ঘটার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি এমনকি আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেন করেনি। যদি আহত শিক্ষার্থীর মারা যেতেন, তাহলে আজ আমরা কি পেতাম কিছুই পেতাম না। ভাষা আন্দোলন, ৭০-র নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি বাংলাদেশে নিরাপত্তা থাকে না, তাহলে দেশের কোনো মা, ভাই-বোন এ দেশে নিরাপদ। আমরা জানতে চাই একটি ঘটনা ঘটার কতদিন পর রেলওয়েল কাছে দৃষ্টিগোচর হবে।
রিফাত শাওন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ট্রেন থেকে আমাদের বন্ধু মিরহাজুল শিবলীকে যেভাবে চলন্ত ফেলে দেয়া হয়, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা রেলওয়েকে আহ্বান এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের যে তিনটি দাবি রয়েছে, সেই দাবি আদায়ে আমাদের সহযোগিতা করুন। যদি সহযোগিতা না করেন, তবে আমরাও জানি ৪৮ ঘণ্টা পর কিভাবে দাবি আদায় করে নিতে হয়। আমরা আশা করব এর আগেই আপনারা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে অভিযুক্তকে যথাযথ শাস্তির আওতায় আনবেন।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো, হত্যাচেষ্টাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও বাংলাদেশ রেলওেয়েকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট জবাবদিহি করতে হবে এবং ঘটনার পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আহত শিক্ষার্থীর সব চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ, একজন যাত্রী হিসেবে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রেলভবন ঘেরাও করে দাবি আদায় করতে বাধ্য হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে।
প্রসঙ্গত, ছুটি শেষে গত শনিবার (৬ মে) রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় গাজীপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার ৪১ নম্বর রেলব্রিজের সামনে চলন্ত ট্রেন থেকে ঢাবি শিক্ষার্থী মিরহাজুল ইসলাম শিবলীকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন এক সহযাত্রী। এতে গুরুতর আহত হন ওই শিক্ষার্থী। মিরহাজুল ইসলাম শিবলী বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।