দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সারা দেশের প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত ডিমের বাজার কারসাজি করে নিয়ন্ত্রণ করে তেজগাঁও ডিম সমিতি। এর সঙ্গে জড়িত আছেন সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।
প্রান্তিক খামারিদের জিম্মি দসা থেকে মুক্ত করে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে ও ডিম মুরগির সংকট কাটিয়ে উঠতে আগামী ২০২৪-২০২৫ বাজেটে খামারিদের সুরক্ষায় ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি জানান বিপিএ নেতারা।
সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ হয় সাড়ে ৯ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকা যা এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা থেকে সাড়ে ১২ টাকা, এই দাম যৌক্তিক।
এখন ডিমের বাজার স্থির আছে। উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন ভোক্তাও ন্যায্যমূল্যে খাচ্ছেন। এই বাজারকে ধরে রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশের ডিম সমিতি ও ডিম ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, মোবাইল এসএমএস ও ফেসবুকের মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে বাড়তি বা কমতি দামকে ব্যস্তবায়ন করে তেজগাঁও ডিম সমিতি ডিমের দাম ঘোষণা করে। এই দাম অন্য সবাই ফলো করে ঢাকা কাপ্তান বাজার ডিম সমিতি, সাভার, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, স্বরূপকাঠি, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও রংপুর। এরপরে তারা কম দামে ডিম কিনে নিয়ে কোল্ড স্টোরেজে মজুত করে পরবর্তীতে সেই ডিম সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিক্রি করে অতি মুনাফা করে। অন্যদিকে উৎপাদক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছেন।
সভাপতি সুমন হাওলাদার জানান, খামারি থেকে চার দিন পর পর ডিম কেনা করা হয়। তিনি অন্য কারো কাছে ডিম বিক্রি করতে পারেন না। একই পাইকারের কাছে তাকে ডিম বিক্রি করতে হয়।
তেজগাঁও সমিতি ডিমের বাজার দর নির্ধারণ করে ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে যে দাম লিখে দেবে সেই দামেই কিনতে হয়। আবার কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর ও নিউমার্কেটসহ ঢাকার বিভিন্ন বাজারে যারা খুচরা ডিম বিক্রি করেন তাদেরকেও সেই দামে ডিম বিক্রি করতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো অভিযোগ করেন, এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তাদের দুর্নীতিতে করপোরেট কোম্পানির পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দামের কারসাজিতে প্রান্তিক খামারিদের ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বাজারে ডিম, মুরগির দাম বাড়লেও খামারিরা উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছেন, তাই সংকট তৈরি দাম আরো বাড়তে পারে।
কৃষি বিপণন যেমন ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে বাজার অস্থির করে দিয়েছে একই পথ অবলম্বন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ৮০ শতাংশ ডিম মুরগি উৎপাদনকারী খামারিদের না রেখে শুধু করপোরেট কোম্পানিদের নিয়ে মিটিং করে তাদের সুবিধা দিয়ে ২৮ টাকার উৎপাদন খরচের মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে দেয় ৬৭ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চায় হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপিএর উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ এসএমই ফোরামের প্রেসিডেন্ট চাষী মামুন, সহ সভাপতি বারি কুমার দে, সাধারন সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার এবং সকল জেলা-উপজেলা আগত প্রান্তিক ডিলার ও খামারিরা।