ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যাপকের লেখা - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যাপকের লেখা

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

একবিংশ শতাব্দীর সভ্য সমাজে নারী কি সত্যি নির্যাতিত, নিপীড়িত, শৃঙ্খলিত, মূল্যহীন এবং দাসী? সমাজে নারী বৈষম্যের কোনো রূপ কি বিদ্যমান? নারী কি তার মতো করে সব ভাবতে পারে বা করতে পারে? অপরাধের সব দায় কি কেবল নারীর? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর তথাকথিত নারীবাদী, প্রগতিশীল বা উচ্চশিক্ষিতদের কাছে নাই। কেননা কোনো না কোনোভাবে এরা সবাই দায়ী।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের পড়াশোনা থেকে দূরে রাখতে সমাজ আপ্রাণ চেষ্টা করে। 

বিষয়টি নিয়েই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের চ্যাথামে ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক অপর্ণা হাওলাদার। তিনি

নিজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নিজের ফেসবুকে এই পোস্ট লেখেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুরুষ ছাত্র এবং শিক্ষকদের ‘মাস্তানি’ নিয়ে কথা হচ্ছে। আমিও ভাবছি, আর পড়ছি। এই লেখাটা আমার নিজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। এই কথাগুলো লিখতে আমার ১২ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে, আমরা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। জুন-জুলাই-এর দিকে রেজাল্ট দিয়েছিলো, এবং রেজাল্ট সূত্রে আমাদের কয়েকজনকে মুখোমুখি হতে হয়েছিলো পত্রিকার সাংবাদিকদের। আমাদের স্কুলে এসএসসি ওই ব্যাচে মেয়েদের তুলনামূলকভাবে রেজাল্ট ভালো ছিলো। 

তো এমনই এক সাংবাদিক স্কুলে আসলেন আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। এবং, উনি প্রচণ্ড অবাক হলেন; বারবার প্রশ্ন করলেন- মেয়েরা এতো ভালো কেন করলো? উনি আমাদের মধ্যে থাকা ছেলেটিকেও বারবার তার সতীর্থ অন্য ছেলেরা এতো ভালো করলো না কেনো, এই প্রশ্ন করতে থাকলেন।

এই ইন্টাভিউগুলো যারা দিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই জানে, কতোটা স্থূল প্রশ্নের ভাণ্ডার হয় পত্রিকাতে। এসএসসি’র রেজাল্ট নিয়ে ওইকালে মাতামাতিও হতো খুব দৃষ্টিকটুভাবে। তবুও কথাটা মনে আছে কারণ সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে উদয়ন স্কুলের প্রিন্সিপালের রুমে একটা আলোচনা হচ্ছিলো। মেয়েরা স্কুল ফাইনালে যতোটা ভালো করছে, ক্যারিয়ারে গিয়ে পরে ততোজন আর ভালো করছে না। কেন? আমরা মাত্রই কিশোরী, পাঠ্যবইয়ের বাইরের দুনিয়া দেখিওনি। এই প্রশ্নটা মনে আসলেও উত্তর জানা ছিলো না। এই অসমাপ্ত আলোচনার কারণেই দিনটা মনে থেকে গেছে, আর প্রশ্নটাও।

আজ কুড়ি বছর পরে প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনায় বসতে ইচ্ছে হলো। এই প্রশ্নের উত্তরটা আমরা অনেকেই জেনেও না জানার ভান করে বসে থাকি। বহুকাল ছাত্র থাকার পরে শিক্ষক হলাম মাত্রই, কিছু উচ্চারণ-করা-যাবে-না বিষয় নিয়ে আলোচনা করার মতো মেরুদণ্ড আজকে তো গজানো উচিত। 

তো, আমি এই লেখায় বাংলাদেশের একাডেমিক দুনিয়ায় নারীর অবস্থা এবং অবস্থান নিয়ে আমার অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে চাইছি।

মেয়েরা ‘ভালো ছাত্রী’ হচ্ছে, কিন্তু সেই থেকে কয়েক ধাপ উঠে স্কলারদের দুনিয়ায় যে নাম করবে, তার মাত্রা এবং সংখ্যা দুটোই আজো সারা দুনিয়াতেই কম। বাংলাদেশে তো কমই। পুরুষতন্ত্র কীভাবে একাডেমিয়ার প্রতি পর্যায়ে নারী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দূরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, আজ তাই নিয়ে কিছু গল্প করবো। 

 

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর এই পথে চলাটাই কিন্তু স্বাভাবিক; শোষিত হাতে কলম তুলে নিলে শাসনযন্ত্র ভয় পাবেই। শিকারি কি চাইবে শিকার হাতে কলম তুলে তার তরফের গল্প লেখা শুরু করুক? চাইবে না।

ক্যারিয়ারের প্রথম নিয়ামক হচ্ছে আন্ডারগ্র্যাড-এর বছরগুলো। এই বছরগুলোতে ঠিক হয় একটা বাচ্চা কতোটা ‘এক্সপোজার’ পাবে, কতোটা স্কলার হয়ে নিজেকে গড়তে পারবে? ক্যারিয়ারে আগানোর জন্য প্রাসঙ্গিক পুষ্টিগুলো তার মন ও মস্তিষ্ক পাবে কতোটা এই বছরগুলোতেই নির্ধারণ হয়! বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একটি নামকরা বিভাগে পড়তাম। বিভাগের নাম এখানে অপ্রয়োজনীয়, কারণ গল্পগুলো প্রায় প্রতিটি জায়গায় একই। সেই ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র হয়ে ঢুকেই প্রথমে দেখলাম, একটি অদ্ভুত সংস্কৃতি আছে। তার নাম যদি দিতেই বলা হয় আমাকে, বলা যায় ‘ভাইয়া সংস্কৃতি’!

এ এক অদ্ভুত কালচার যে না দেখেছে, সে বিশ্বাস করবে না! তিনটির বেশি কোর্সই অফার করা হয় না একেক বছরে, তাই কোর্স সিলেকশন নিয়ে মাথাব্যথাই নেই; সেমিনার কনফারেন্সের বালাই নেই, এক ক্লাসে ২০০ ছাত্রছাত্রী কোনোভাবে বসাই মুশকিল কথা শোনা তো আরো পরের কথা। কিন্তু সব ছাপিয়ে সবার মুখে ‘ভাইয়াদের’ কীভাবে হাতে রাখা যায়, তাই নিয়ে দিবারাত্র আলোচনা। 

ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমে, ক্লাসে, লাইব্রেরির সামনে গোল হয়ে বসে ছাত্রছাত্রীরা আলোচনা করে ‘ভাইদের’ সঙ্গে তাল দিয়ে না চললে কী কী বিপদ হবে, তাই নিয়ে।

এই ‘ভাইয়া’ কারা? এরা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র পুরুষ শিক্ষার্থী এবং কেউ কেউ ডিপার্টমেন্টেরই তরুণ পুরুষ শিক্ষক, কেউ কেউ সদ্য ‘বিলাতফেরত’। তারা প্রতিনিয়ত ডিপার্টমেন্টে কোথায় কী ঘটছে, তা শিক্ষকদের সাপ্লাই দেন। 

মোটামুটিভাবে, সিসিটিভির কাজ করেন এই ‘ভাইয়ারা’। যেহেতু আজও বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচণ্ড ইমম্যাচিউর মানুষদের, কেবল রেজাল্ট-এর ভিত্তিতে ফ্যাকাল্টি নেয়া হয়, এই ‘ভাইয়া’রা মোটামুটি মাস্তানি করেই দিনযাপন করেন।

ডিপার্টমেন্টের এই ‘ভাইয়ারা’ গেটকিপার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। মেয়েদের পর্যন্ত একাডেমিক তথ্য আসেই না যদি না মেয়েটি কিছু ‘অ্যাডজাস্ট’ করতে প্রস্তুত হয়। তারপর, নারী শিক্ষকদের হেনস্থা করেন ‘ভাইয়ারা’ এবং ‘ভাইয়া’দের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্ররা। 
আমার থার্ড ইয়ার ম্যাথের শিক্ষিকা প্রচণ্ড ভালো পড়ালেও ‘মেয়েমানুষের কাছে ম্যাথ পড়বো না’ এই চেঁচামেচিতে তাদের গলা দম্ভে কেঁপে থাকে, আমরা শুনে না শোনার ভান করে চলে আসি। প্রতিবাদ করলে মান ইজ্জত নিয়ে থাকা যাবে না, এই ভয়ে। এইসব ‘ভাইয়ারা’ দিবালোকে নারী শিক্ষার্থীদের ‘হারামজাদী’ ডাকেন, নারী শিক্ষার্থীরা ভয়ে লুকিয়ে থাকেন। এরা ডিপার্টমেন্টের সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করেন, সুতরাং মানসম্মান নিয়ে টিকে থাকতে হলে ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ নীতিতে থাকতে হয়।

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘মাস্তানির’ ওপর টিকে থাকায় আসলে ‘ভাইয়া’ সংস্কৃতিই স্বাভাবিক হওয়ার কথা হয়তো। কিন্তু এই ‘মাস্তানির’ ভেতর একজন নারী শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার জন্য যে গ্রুমিং প্রয়োজন, তার কিছুই পাওয়া সম্ভব হয় না। আবার, কোনো কোনো নারী এই সিস্টেম টিকিয়ে রাখতেও সহায়ক ভূমিকায় নেমে যান। পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোতে নারীদের অনেকেই খুঁটি হিসেবে কাজ করেন।

প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষে তবু মাস্তানি কিছুটা সহ্য করা যেতো। শেষের কয়েক বছর সোজা কথায় অসহ্য হয়ে উঠবে পুরো সিস্টেম। আমি জিআরই, টোফেলের কাজ সেরে আবিষ্কার করলাম ডিপার্টমেন্টের পুরুষ শিক্ষকেরা রেফারেন্স লেটার লিখতে প্রস্তুত নন আমার জন্য। সমস্যা হলো যে, এরাই একাধিক কোর্স পড়িয়েছে এবং গুজব ছিলো যে মার্কিন মুল্লুক ফেরত না হলে রেকমেন্ডেশন লেটার ভালো হয় না।

রেজাল্ট, জিআরই/টোফেল স্কোর সবই আমার ভালোই ছিলো। অ্যাপ্লাই করছিলামও কেবল কানাডার মিড র‍্যাংকের মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্যই। কোনো হার্ভার্ড এমআইটিতে না। কিন্তু এই পুরুষ শিক্ষকেরা মোটামুটি একটা অদ্ভুত লজিক দিয়ে বা লজিকেরও বালাই না রেখে লেটার দেবেন না বললেন। আমাকে মুখের ওপরেই বললেন যে, তাদের পুরুষ ছাত্র আছে এইসব জায়গায় পাঠানোর জন্য, আমাকে লেটার দেয়া যাবে না।

এরপর বিভাগের কিছু নারী শিক্ষক আমাকে সেইযাত্রায় উদ্ধার করেন। বিভাগে নারী শিক্ষক তেমন ছিলেন না ওই সময়, আমার মাত্রই কয়েকটি ক্লাস নিয়েছিলেন নারী শিক্ষকেরা। ওই কয়েকজনের কেউই একটি নেগেটিভ কথা বলেননি, কিছু করেননি যা নিরুৎসাহিত করতে পারে। নারী এবং পুরুষ শিক্ষকদের ব্যবহারের তারতম্যটাও অনেকটাই কাঠামো দ্বারা নির্ধারিত। আমার বিভাগে নারী শিক্ষক কাউকে বিন্দুমাত্র ‘মাস্তানি’ করতে দেখিনি, বরং সবাই ছাত্রছাত্রীদের কল্যাণেই চেষ্টা করতেন।

গল্পটা সেখানেই শেষ নয়। কানাডার চারটি স্কুল থেকে মাস্টার্সের ফান্ডিং পাওয়ার পরে একদিন বিভাগে কিছু কাগজ নিতে গিয়েছিলাম। এক শিক্ষক কিছু সিনিয়র নারী শিক্ষার্থীর ব্যর্থতার উদাহরণ দিলেন আমাকে রাস্তায় আটকিয়ে। এই বলার জন্য, মেয়েরা তো পারেই না, তুমি তো দেখেছ, কী দরকার গিয়ে। 

পুরুষ শিক্ষকেরা একজন বললেন, দেশেই থাকতে। আরো বললেন, বিয়ে করার বয়স তোমার, পড়াশোনা করার কী দরকার। এটাও ইঙ্গিত করলেন যে, আমি দেশের বাইরে যেতে চাইছি কারণ লুকিয়ে ‘বিধর্মী’ কাউকে বিয়ে করবো। এভাবে যাওয়ার দরকার নেই, উনি আমার পরিবারকে রাজি করাবেন সত্য জানলে। একে তো নারী শিক্ষার্থী, তার ওপরে হিন্দু নাম!

তার মাঝেই দুই একজন ‘ভাইয়া’ ছড়ালেন যে আমি ‘স্যারদের’ সঙ্গে অনেক কিছু করে বেড়াচ্ছি রেফারেন্স লেটারের জন্য। নারীর ‘বেশ্যাকরণ’- এর মেথড আবিষ্কারে এদের কেউ কেউ নোবেল প্রাইজ পাওয়ার যোগ্যতা রাখতেন! 

এইভাবে, কেবলমাত্র একটি মাস্টার্সের অ্যাডমিশনের জন্য ৬ মাস প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপে চূড়ান্ত অপমাণ সহ্য করতে হলো। হয়, আমাদের অনেককেই। আমার গল্পটা আমার পরিচিত আরো অনেক ‘অ্যাডজাস্ট’ করতে না চাওয়া মেয়েদের মতোই, এর কিছুই আসলে নতুন নয়। 

প্রিভিলেজড সমাজের অংশ হওয়ার কারণে আসলে অনেক বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছি, তাও স্বীকার করতেই হয়। আমার জানা মতে, আমার বিভাগ থেকে এখনো মফস্বলের নারীদের একাডেমিয়ায় আসার নজির প্রায় নেই।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার্সের জন্য দেশ ছেড়েছিলাম। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরলাম। গত ১০ থেকে ১১ বছরে মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্টডক সূত্রে। একাডেমিয়ার অনেক খাটনি নিয়ে আমরা সবাই নালিশ করি, কিন্তু এই বছরগুলোতে একবারের জন্য কোথাও একটুও ঝামেলা পোহাতে হয়নি। 

এমনকি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক করতে গিয়ে দেখেছি, ছাত্রছাত্রীর স্বার্থকেই সবচেয়ে বড় করে দেখা হয়। যাদের সঙ্গে রিসার্চের কাজ করেছি, সবাই বলার আগেই সাহায্য করেছেন যতোদিকে সম্ভব। রেফারেন্স লেটার নিয়ে যে এত রাজনীতি করা যায়, এটা বাংলাদেশ না হলে বুঝতামই না।

নর্থ আমেরিকাতেও কিন্তু একাডেমিয়ায় পুরুষতন্ত্র দেখি। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ‘ঐ মেয়েটা ভালো করলো কেনো, ওর নিশ্চয়ই চরিত্র খারাপ’ এতো পুরুষতান্ত্রিকতা দেখিনা। এখানের একটা উদাহরণ দেই, কনফারেন্সে পেপার প্রেজেন্ট করে ব্যাগ গুছিয়ে বের হচ্ছি। একজন এগিয়ে এসে প্রশংসা করে বলে বসবেন, ‘কার কাছে থেকে পেয়েছো এই রিসার্চ আইডিয়া?’

আবার, জটিল থিওরি থাকলে বলে বসবেন, কে করে দিয়েছে এই জটিল কাজগুলো? এই কথাগুলোতে প্রচ্ছন্ন যে পুরুষতান্ত্রিকতা আছে, সেটা বলাই বাহুল্য। কিন্তু, বাংলাদেশের মতো কোনো মেয়েকে কিছুই করতে দেবো না, এইরকম পোক্ত পুরুষতন্ত্র খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এতো কথা লেখার প্রয়োজন হলো, কারণ আমি অনেক মেয়েকেই দেখি এসবে ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দিতে। মেয়েরা যে একাডেমিয়ায় আসছে না, বাংলাদেশে একাডেমিক সমাজে আজ যে নারী নাম কয়েকটিও নেই সেই প্রশ্নও কেউ তুলছে না। 

ক্যাম্পাসে দিনদুপুরে মেয়েদের যৌন সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে, তার বেশিরভাগের বিচার হচ্ছে না। শারীরিক হামলা নিয়ে কথা বলেই আসলে এগোতে পারি না, তার ওপর এইসব দিবারাত্রির একাডেমিক মাস্তানি নিয়ে কথা বলার সময় সুযোগ কই? নালিশের পর নালিশে, পুরো সিস্টেমের একগুঁয়ে লেগে থাকায়, প্রতিটি মুহূর্তে কনফিডেন্স ভেঙে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টায়, কতো নারী শিক্ষার্থী আর চেষ্টাই করে না একাডেমিয়া নিয়ে।

বিশ বছর পর অন্তত মনে হলো, বাংলাদেশে মেয়েরা কেনো ‘ভালো রেজাল্ট’ করে, কিন্তু ক্যারিয়ারে পেছনে পড়ে যায়, তা নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু আলোচনা হোক। আজকের মেয়েদের স্বার্থেই কিছু কথা শুরু হোক। মেয়েরা জানতে শিখুক যে এই দমিয়ে রাখার প্যাটার্নটাই স্বাভাবিক। কারণটা খুব স্পষ্ট। নারীদের পুরুষেরা পছন্দ করে ‘বোকা মেরুদণ্ডহীন’ হলে। কোনো কিছু নিয়ে দুই লাইন কথা বলার ক্ষমতা রাখে না, এমন নারীদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহায়ক মনে করে। 

এর বিপরীতে হেঁটে কিছু করতে চাইলে পুরুষতন্ত্র নিজেকে আক্রান্ত ভাবে। অন্যান্য ক্যারিয়ারেও একই দশা হওয়া অসম্ভব নয়। আমি একাডেমিয়ার সঙ্গে বেশি পরিচিত, তাই সেটা নিয়েই লেখা।

শেষে তিনি লিখেন, বিশ বছর পরেও আমি এবং আমার সমমনা অনেক বন্ধু টিকে যেহেতু আছি, ‘ভাইয়াদের চরণতলাচ্ছিন্ন’ হয়েও টিকে থাকা যায়, আজকের কিশোরীদের জন্য শুধু এটুকুই বলার আছে।

৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038700103759766