ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, ঢাবিতে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি প্রযোজ্য। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য আলাদা কোনো একাডেমিক নীতিমালা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইভা বোর্ডে ছাত্রীকে হিজাব খোলানোর অভিযোগের বিষয়ে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। রোববার শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ভাইভা ও অন্যান্য একাডেমিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখা বাধ্যতামূলক হলেও এ বিষয়ে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যাখ্যা করে শিক্ষকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে। বাধাদানকারী বা অপপ্রচারকারী যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানায় শিক্ষক সমিতি। এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দাও জানানো হয়েছে।
শিক্ষক সমিতি আরো উল্লেখ করা হয়েছে, একাডেমিক নীতিমালা অনুযায়ী যে কোনো পরীক্ষায় ‘পরিচয়’ নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষককে অবশ্যই প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে শিক্ষার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখতে হয়, যা শিক্ষকদের একাডেমিক ও পেশাগত দায়িত্বের অংশ। এ রূপ দায়িত্ব পালনে শিক্ষকদের অসহযোগিতা তথা মুখমণ্ডল দেখাতে অস্বীকৃতি জানানো পরোক্ষভাবে একাডেমিক রীতি-নীতিকে অস্বীকার করার শামিল। এক্ষেত্রে কোনো কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করছে, যা কাম্য নয়।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেতারা আরো বলেন, এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে একই ইস্যু সৃষ্টি করে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। মহামান্য আদালত, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমের সময় মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখার পক্ষে রায় দেন।
তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে ধারণ করে, এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও পোশাক-পরিচ্ছদের স্বাধীনতা রয়েছে। অপরদিকে একাডেমিক কার্যক্রমেরও বিশেষ বিধিবিধান রয়েছে। মনে রাখতে হবে, ঢাবি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এখানে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য একই নীতি প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য আলাদা কোনো একাডেমিক নীতিমালা সম্ভব নয়। অতএব সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নীতিমালা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনা করবেন, এটাই স্বাভাবিক।
শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলা বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে মুখমণ্ডল অনাবৃত রাখার বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করার যে অপতৎপরতা চলছে, সে বিষয়ে শিক্ষক সমিতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মনে রাখতে হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করে এবং একই সঙ্গে শিক্ষকদের একাডেমিক স্বাধীনতাকেও মূল্য দেয়।