ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - দৈনিকশিক্ষা

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ!

সংবাদ ভাষ্যকর |

ঠিক দুই দশক আগের কথা। এক দুপুরে সচিবালয়ে তৎকালীন শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এই লেখকের কাছে জানতে চান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কোন শাখাকে জাপান বলা হয়। কেনো বলা হয়? জাপান শাখায় প্রেষণে বদলিভিত্তিক পদায়ন পেতে কেনো শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা এতো মরিয়া? কেনো বোর্ডের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই শাখায় বছরের পর বছর থাকতে চান? 

প্রতিমন্ত্রীর মুখে একটানা হাফ ডজন প্রশ্ন শুনে তাজ্জব বনে যান এই লেখক। জাপান উপাখ্যানের কিছু জানেন না দাবি করলেও নাছোড়বান্দা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। এই প্রতিবেদককে বারবার অনুরোধ করে বলতে থাকেন, তিনি গতরাতেই শুনেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই কিচ্ছা। তখনই ঠিক করে রেখেছেন অভিজ্ঞ শিক্ষা সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইবেন বিস্তারিত। বাস্তবে এই প্রতিবেদকও ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে হালকা আলোচনায় বোর্ডের জাপান ও দুবাই শাখার কথা শুনেছেন। কিন্তু ঠিক কি কারণে তা খতিয়ে দেখেননি। তাই প্রতিমন্ত্রীকে বিস্তারিত বলতেও পারেননি।

অবশেষে রক্ষা। প্রতিমন্ত্রীই বলতে থাকেন। জাপান উপ্যাখ্যানেরও বিস্তারিত জানতে পারেন এ প্রতিবেদক।

আজ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ। ওই ঘটনার ঠিক বিশ বছর পর আবারো আলোচনায় জাপান শাখা। কলেজ শাখায় গত তিন বছরের বেশি সময় যিনি ছিলেন তাকে গত ঈদুল ফিতরের আগের অফিসের দিনে কুমিল্লায় বদলি করা হয়। জাপান শাখা প্রধানের বদলি ঠেকাতে বরিশাল এলাকার একজন সাবেক নারী কোটার সংসদ সদস্য তদবিরে গিয়েছিলেন। ব্যর্থ মনোরথে ফিরে আসেন। কিন্তু ইতোমধ্যে জাপানের টিকিটের রেট বেড়েছে। শিক্ষা ক্যাডারের জিয়া পরিষদের একজন সদস্য ‍যিনি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের  পদধারী ছিলেন। বাবা ভিক্ষা করতেন। শিক্ষাখাতের দুরমুজ-খ্যাত মিনিস্ট্রি অডিট বা ডিআইএতে চারদফায় মোট ২ বছর চাকরি করে এখন নরসিংদী এলাকার এক সরকারিকৃত কলেজের অধ্যক্ষ। নাখালপাড়ায় দুটো পাঁচ ও সাততলা বাড়ী তার। স্ত্রীকে ভুয়া সনদ দিয়ে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুল এন্ড কলেজে চাকরি দিয়েছিলেন। দশ বছরেও একবার কলেজে না গেলেও এমপিওর টাকা ঠিকই পেতেন। দুই বছর আগের এক তদন্ত প্রভাবিত করে শিক্ষা ভবনে জিয়ার পরিষদের আরেক সদস্য মাধ্যমিক শাখার পরিচালন বেলাল হোসাইনের মাধ্যমে। বেলালও ইবির সাবেক ছাত্রশিবির নেতা। জিয়া পরিষদের এই সদস্য ঢাকা বোর্ডের জাপান শাখায় যেতে ২০ লাখ জমা দিয়েছেন দুই হাতে। যাদের হাতে জমা পড়েছে তাদের একজন শিক্ষা ক্যাডারের শৃঙ্খলার দুয়ারে টানা গত দশ বছর কুঠারাঘাত শেষে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ক্যাডার কর্মকর্তা মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ এর শিষ্য।

তাদের আরেকজন গুরু চাঁদপুরের অখ্যাত ও বেদরকারি এক কলেজের মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবিবাহিত অধ্যক্ষ বটে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে হঠাৎ তাকে চাঁদপুর থেকে এনসিটিবিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।  এনসিটিবির চিঠিতে বেদরকারি সেই অধ্যক্ষকে ‘তথ্যজ্ঞ’ তকমা দেয়া হয়। গত পাঁচ বছর পাঠ্যপুস্তক হাবিজাবিকরণে তার ভূমিকা সর্বজনবিদিত। শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদা রক্ষা কমিটির সদস্যরা মিনিবাস ও লঞ্চে করে চাঁদপুর যেতেন ভেট দিতে। এনসিটিবিতে আসলে গাড়ীর দরজা খুলে দিতেন শিক্ষা ক্যাডারের মর্যাদা রক্ষা কমিটির সদস্যরা। পূর্বাণী হোটেলে থাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে এনসিটিবির বিবিধ খাত থেকে। পাঁচ বছর শিক্ষাখাতে ছড়ি ঘুরিয়ে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি আবার ইলিশ দর্শনে রত হয়েছেন! শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষাসচিব, শিক্ষা ভবন, ডিআইএ, কিংবা ফেসবুক শিক্ষাখাতের কাউকে আর ছবক দেন না বেসরকারি সেই অধ্যক্ষ। গত পাঁচ বছর ম্যালা দিয়েছেন। 

জাপান শাখায় যাওয়ার আরো একজন যাত্রীর নাম শোনা যায়, ‍যিনি কয়েকবছর আগে ঢাকা বোর্ডের জাপান শাখায় দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি থাকাকালে জিপিএ ফাইভ বিক্রির অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রথমে বোর্ড ছাড়া, পরে অন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে তিন বছর চাকরি করে  ফিরে এসে বর্তমানে অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি শিক্ষা ভবনের সরকারি কলেজ শাখায়ও ছিলেন বাড়ৈতন জামানায়।

জাপান শাখায় যাওয়ার আরো একজ যাত্রীর সন্ধান মিলেছে। টিকিটের জন্য ২৫ লাখ খরচ করতে রাজী সরকারি তিতুমীর কলেজে ওই অধ্যাপক ও জিয়া পরিষদের ঘাপটি মেরে থাকা সদস্য। জামায়াত নেতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর মৃত্যুর পর তিনি সস্ত্রীক তার জানাযায় গিয়েছিলেন বলেও সম্প্রতি খবরে প্রকাশ পেয়েছে। যার স্ত্রী পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দুর্নীতির দোকান খুলেছিলেন। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার স্ত্রীকে নিয়ে ‘সাত দিনের ভারপ্রাপ্ত ডিজি হয়েই হাতিয়ে নেন ৭ কোটি টাকা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে হইহই পড়ে যায় গত ১৯ এপিল থেকে।

জিয়া পরিষদের আরো এক সদস্য যিনি তিতুমীর কলেজে ঘাপটি মেরে আছেন, তিনিও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান শাখায় যেতে চান। তিনি একজন মন্ত্রীর সুপারিশসহ আবেদন জমা দিয়েছেন।    

ঢাকা বোর্ডের সাবেক এক নারী কর্মকর্তা ‘স্বামী কেন যৌন কেলেংকারি মামলার আসামী’  ছবি নিয়ে কয়েকবছর ঢাকার বাইরে ব্যস্ত ছিলেন। তার স্বামীকে কৌশলে ক্যামব্রিয়ানের শিক্ষক দেখিয়ে ঢাকার বাইরের একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ডেপুটি রেজিষ্টার ও পরে রেজিস্টার বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন আট বছর আগে। চার বছর আগে যৌন কেলেংকারিতে চাকরি চলে গেলেও আদালত ম্যানেজ করে গত বছর ফিরে আসেন স্বপদে। ঢাকা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকাকালে নিজ কন্যার ফলাফল জালিয়াতি করে ধরা পড়েছিলেন। তিনিও এবার জাপান অথবা দুবাই শাখায় যেতে মরিয়া। তিনিও বাড়ৈতন সিন্ডিকেটের সদস্য।  

জাপান শাখার আরেকজন যাত্রীর নাম শোনা গেছে। মৃদু ও মিষ্টভাষী এ প্রার্থী চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অদক্ষতার পারদ চড়িয়ে ঢাকায় এসেছিলেন কয়েকবছর আগে। তিনি  ঢাকা শহরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিবন্ধনে বাংলাদেশ ব্য্যাংকের সীল মারা একসাইজের কিছু কাগজ জাহাজযোগে চট্টগ্রাম পাঠিয়েছিলেন মর্মে বোর্ডের দুবাই শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখে মুখে।   

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048060417175293