ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগে সব ধরনের পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তে কান ও মুখ খোলা রাখার নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছেন চেম্বার জজ আদালত।
এ বিষয়ে করা আপিল আবেদনের শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। একই সঙ্গে শুনানির জন্য আগামী ২২ মে দিন ঠিক করেছেন আপিল আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুল আলম।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের করা এ সংক্রান্ত আপিল আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (৭ মে) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের চেম্বার আদালত নো অর্ডার দেন।
আদালতে আজ ঢাবির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল মো. সাইফুল আলম। অন্যদিকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন, রিটকারী আইনজীবী ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ ও মাহমুদুল হাসান।
ঢাবির বাংলা বিভাগে সব ধরনের পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীর পরিচয় শনাক্তে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৮ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর দ্বৈত বেঞ্চ এ সংক্রান্ত নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। নোটিশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ ওইদিন বলেন, আদালত বলেছেন প্রত্যেক মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। এটাই আমাদের সংবিধানের স্পিরিট। কাউকে কানসহ মুখ খোলা রাখতে বাধ্য করা যাবে না।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশন চলাকালে প্রত্যেক ছাত্রীর কানসহ মুখ খোলা রাখার নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থীর পক্ষে আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ এ রিট দায়ের করেন।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে জানানো যাচ্ছে যে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলা বিভাগের একাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী বাংলা বিভাগের প্রতি ব্যাচের সংযোগ ক্লাস (টিউটোরিয়াল/প্রেজেন্টেশন), মিডটার্ম পরীক্ষা, চূড়ান্ত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীকে পরিচয় শনাক্ত করার জন্য কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখতে হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সিদ্ধান্ত প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকরা এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের অবহিত করেছেন। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্ত পালনে শৈথিল্য দেখাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে গত ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, ‘১৮ সেপ্টেম্বর গৃহীত সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে যারা পালন করবে না তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।
রিট আবেদনে ওই নোটিশকে কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার ও মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় আচার পালনে বাধা না নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। পাশাপাশি রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ওই বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয় রিটে।