দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : তিনদিন ধরে অপহৃত দুই ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার শাহবাগ থানার সাব-ইনসপেক্টর আল আমিন তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপহৃত দুই ব্যক্তি হলেন, মোহাম্মদ আব্দুল জলিল এবং হেফাজ উদ্দিন। গত শনিবার রাতে শাহবাগ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম তাদেরকে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করেন।
গ্রেফতার ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুল হাসান সাইদি, ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার প্রচার উপ-সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির হোসাইন এবং একই হলের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপসম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ তানসেন।
প্রক্টরিয়াল টিমের বরাতে জানা যায়, ব্যবসার জন্য শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে থেকে ৩৫ লাখ টাকা ধার নেন জলিল। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানা বাহানা করে টাকা দিতে দেরি করছিলেন। তাই শাহাবুদ্দিন ১০-১২ জন নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আব্দুল জলিলকে তার হাতিরঝিল থানার হাজিপাড়ার বাসা থেকে অপহরণ করেন। এ সময় তার সাথে থাকা হেফাজ উদ্দিনকেও অপহরণ করা হয়। আব্দুল জলিলকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এবং পরবর্তীতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছন ঢাবি প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান।
জানা গেছে, অভিযুক্ত মুনতাসির হলে শাহাবুদ্দিনের আত্মীয় বলে পরিচিত।
ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, শাহাবুদ্দিন আমার থেকে ৩৫ লাখ টাকা পান। কিন্তু মাঝখানে ওনার সাথে আমার যোগাযোগ হয় না। পরে আমাকে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টায় বাসা থেকে ১০-১২ জন তুলে আনেন। আমাকে বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়েছে। গত তিনদিন ধরে হলে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাকে যে মারা হচ্ছে আমি ভয়ে চিৎকারও করতে পারছিলাম না।
শাহবাগ থানার সাব-ইনসপেক্টর আল আমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আব্দুল জলিলের শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কক্ষটি(৫৪৪) খুঁজে আমরা তেমন কোনো অস্ত্র পাইনি। তবে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন দৈনিক শিক্ষডটকমকে বলেন, তারা যে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমরা জানতাম না। যখন কমিটিতে পদ পেয়েছে, তখন তারা এ ধরনের কোনো কাজে জড়িত ছিলো না। এখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি করে। তাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরাও ছাত্রলীগ থেকে ব্যবস্থা নেবো। তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুহসিন হলে চার বা পাঁচ তলায় আমাদের কয়েকজন ছাত্রের সহযোগিতায় একজনকে তুলে আনা হয়েছে। টাকা আদায়ের উদ্দেশে তাকে মারধরও করা হয়েছে। পরে শাহবাগ থানা ও হল প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করি। জড়িত ও ভুক্তভোগীদের জড়ো করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে সব ঘটনা বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী এদের বিচার হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে থাকবে।