সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হবে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ তালাবদ্ধ করে। পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ত্রিশ মিনিট আগে সতর্কীকরণ ঘণ্টা বাজিয়ে কেন্দ্রের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে তালাবদ্ধ করতে হবে। এরপর কোনো প্রার্থীকে প্রবেশ বা বের হতে দেয়া হবে না। এ সময় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া আর কাউকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বা বের হতে দেয়া হবে না। এ পরীক্ষায় প্রার্থীদের কান খোলা রেখে বসতে হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পরিদর্শককে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা পরিচালনার নির্দেশিকায় এ তথ্য জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বিষয়টি দৈনিক আমাদের বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন।
সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা আগামী শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে বরিশাল, সিলেট ও রংপুর বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রথম ধাপের পরীক্ষা আবেদনকারীদের নিজ নিজ জেলায় অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল ৯টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ডিসি-শিক্ষক-পুলিশ ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এ পরীক্ষা পরিচালনা করবে। ডিসির নেতৃত্বে এ কমিটিতে পুলিশ সুপার, স্থানীয় সরকারি কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রধান শিক্ষক এ কমিটির সদস্য হবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। পরীক্ষা পরিচালনার নির্দেশিকাটি ইতোমধ্যে ডিসি ও ডিপিইওদের পাঠিয়েছে অধিদপ্তর।
জানা গেছে, প্রশ্নাতীত প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের এসব নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রত্যেক কেন্দ্রে ২৫ জন প্রার্থীর জন্য একজন করে কক্ষ পরিদর্শক নিয়োগ করবে জেলা কমিটি। সরকারি কলেজ, পিটিআই, সরকারি মাধ্যমিক স্কুল, সরকারি কারিগরি কলেজ বা মাদরাসা, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পাবেন। কোন পরিদর্শক কোনো কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন তাও নির্ধারণ করা হবে পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে লটারির মাধ্যমে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী মনিটরিং অফিসার, ইউআরসি সহকারী ইনস্ট্রাক্টররা এ পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। কারো কোনো নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী থাকলে তাকে কেন্দ্র সচিব বা পরিদর্শকের দায়িত্ব দেয়া যাবে না।
নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পুলিশ পাহাড়ায় ওএমআর সিট, গোপনীয় ডকুমেন্টস্ সিলগালা করা ট্রাংকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠাবে। ট্রেজারিতে নিরাপদ হেফাজতে সংরক্ষণ করা হবে। পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো অবস্থাতেই ট্রাংক খোলা যাবে না। প্রশ্নপত্র ও গোপনীয় কাগজপত্র সিলগালা করা ট্রাংকে পুলিশ ফোর্সসহ একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা।
পরীক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রার্থীদের তল্লাশী করা হবে। নারী প্রার্থীদের মহিলা পুলিশ ও পুরুষ প্রার্থীদের পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তল্লাশী করবেন। প্রার্থীর কাছে কোনো ডিভাইস আছে কি না তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শনাক্ত করা হবে। পরীক্ষা আয়োজনের নির্দেশিকা অনুসারে, এ পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোন কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তর। যদি কোনো পরীক্ষার্থী এসব সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে তবে তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে প্রার্থীদের ওএমআর শিট সরবরাহ করা হবে। হাজিরা শিটে পরীক্ষার্থীর ছবি, তথ্য ও স্বাক্ষর মিলিয়ে তার উপস্থিতি নিশ্চিত হতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে প্রশ্নের প্যাকেট পৌছাবে কক্ষ পরিদর্শকের হাতে। তবে তখনই তিনি তা বিতরণ করতে পারবেন না। পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা পড়লে পরিদর্শক প্যাকেট খুলে প্রশ্ন প্রার্থীদের দেবেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে প্রার্থীদের সতর্ক করতে ঘণ্টা বাজাতে হবে। পরীক্ষা শেষ হলে পরিদর্শক প্রার্থীদের কাছ থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করবেন। উত্তরপত্র ও প্রশ্নপত্র চূড়ান্তভাবে হস্তান্তর না করে কোনো প্রার্থী কেন্দ্র থেকে বের হতে পারবেন না।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, আগামী শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপের পরীক্ষা নেয়া হবে। এ পরীক্ষা আয়োজনে নির্দেশিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের। নির্দেশিকা অনুসারে জেলা কমিটি পরীক্ষা আয়োজন করবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।