ছাত্রলীগের তিন নেতাকে নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানার পুলিশ সদস্যদের কার কী ভূমিকা ছিল তা খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। রমনা বিভাগের বরখাস্ত হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদ এবং শাহবাগ থানা থেকে প্রত্যাহার করা পরিদর্শক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা ছাড়াও প্রায় ১৫ পুলিশ সদস্য নির্যাতনে অংশ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিভাগীয় তদন্তের এ পর্যায়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তদন্ত শেষে পরিদর্শক ছাড়াও থানার একাধিক পুলিশ সদস্য অভিযুক্ত হতে পারেন। যার আলোকে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার।
এ ছাড়া ঘটনার সূত্রপাতের সময় বারডেম হাসপাতালে কার কী ভূমিকা ছিল সেসবও গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গতকাল বুধবার ডিএমপির গঠন করা এই কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। তবে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করতে না পারায় এর আগেই তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দিন সময় বাড়ানো হয়েছে বলে ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপারেশন) আবু ইউসুফকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন ডিএমপির নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ এবং ডিবির মতিঝিল জোনের এডিসি রফিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন
এডিসি হারুন সাময়িক বরখাস্ত
পিস্তলের বাট দিয়ে আমার দাঁত ভেঙেছে এডিসি হারুন: ছাত্রলীগ নেতা নাঈম
ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার ফারুক হোসেন গতকাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের অভিযোগ ওঠার পর ডিএমপির পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে এবং তাদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের স্বার্থে এবং এডিসি হারুন ছাড়া অন্য কারা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের কার কী ভূমিকা ছিল এবং ঘটনার সূত্রপাত যেখানে বারডেম হাসপাতাল, সেখানে কারা কারা ছিলেন, কার কী ভূমিকা ছিল সব তদন্ত করতে আরও সময় প্রয়োজন। সেজন্য তদন্ত কমিটি আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় আবেদন করেছিল। ডিএমপি কমিশনার তাদের তদন্তকাজ শেষ করতে আরও পাঁচ কার্যদিবস সময় দিয়েছেন। এই পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে যারা ঘটনার সঙ্গে দায়ী থাকবেন, সে অনুযায়ী ডিএমপি কমিশনার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
গত শনিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নির্যাতনের শিকার হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ। ঘটনার সূত্রপাত হয় বারডেম হাসপাতালে। সেখানে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর করা হয়। এ ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক ও এডিসি হারুন-অর-রশীদের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে। সেই দ্বন্দ্ব ছিল আজিজুলের স্ত্রী ডিএমপির আরেক এডিসি সানজিদা আফরিনকে কেন্দ্র করে। এ ঘটনায় এডিসি হারুনকে গত সোমবার সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে গত মঙ্গলবার হারুন-অর-রশীদকে রংপুর রেঞ্জ উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে এডিসি সানজিদা আফরিনকেও রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) বদলি করা হতে পারে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তবে সানজিদার বদলির বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মুখপাত্র ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘এডিসি সানজিদাকে রংপুর বদলি করার খবরের সত্যতা নেই। এখন পর্যন্ত এমন কোনো অর্ডার হয়নি। এডিসির বদলি বিষয়ে কোনো আদেশের কপি পাই নাই।’
আরওপড়ুন:
ছাত্রলীগ পেটানো এডিসি হারুনকে রমনা থেকে প্রত্যাহার
ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের নেপথ্যকথা ও নারী পুলিশ কর্মকর্তার বয়ান