তিন শিক্ষক বরখাস্ত হলেও বহাল তবিয়তে ইউআরসি কর্মকর্তা! - দৈনিকশিক্ষা

তিন শিক্ষক বরখাস্ত হলেও বহাল তবিয়তে ইউআরসি কর্মকর্তা!

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

প্রথমে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের ভাতার টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। পরে ওই কর্মকর্তা তিন অভিযোগদাতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় তিন অভিযোগদাতা কোনোপ্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। অথচ এখনও বহাল তবিয়তে আছেন রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মাত্র কয়েকদিন আগে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে তুমুল সমালোচনার ঝড় বইছে। চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন শিক্ষক হলেন- ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আফতাবুল করিম মেনন, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান ও সহ-সম্পাদক শামীমা আক্তার সীমা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিংয়ে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ব্যাগ, কলম, নাস্তা ও ভাতাসহ নানা উপকরণ সঠিকভাবে বণ্টন না করার অভিযোগ আনেন উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী ৪৫ জন শিক্ষক। গত ২৩ জুন এমন অভিযোগ জেলা প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট বরাবর প্রদান করেন ভুক্তভোগী শিক্ষকগণ।

উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তথ্য সংগ্রহসহ শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহে নেতৃত্ব দেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকনেতা আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা। শিক্ষকদের দেওয়া অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন গত ২৫ জুলাই ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার ওই তিন শিক্ষকনেতার বিরুদ্ধে ট্রেনিংয়ের প্রতি ব্যাচ থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদাদাবি করাসহ অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে (২৯ আগস্ট) আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান।

বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। অন্যদিকে ৪৫ জন শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত অভিযোগের তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি করা হলেও সেই কমিটির কার্যক্রম ধীরগতিতে চলমান রয়েছে। কবে এ তদন্ত শেষ হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। এ ছাড়া এমন ঘটনার পরে ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলেও চাকরি হারানোর ভয়ে কোনো শিক্ষক মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, প্রায় সাড়ে নয় বছর ধরে ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শাহীনুর আক্তার। তিনি যোগদানের পরই রিসোর্স সেন্টারটি বিভিন্ন অনিয়মের আখড়া হয়ে উঠেছে। এখনও তিনি ঠিকমতো অফিসে আসেন না। বাড়িতে বসে অফিস করে একসঙ্গে কয়েকদিনের হাজিরা প্রদান করেন। এ ছাড়া তিনি ট্রেনিংয়ে শিক্ষকদের প্রাপ্য টাকা সম্পূর্ণ দেন না। পরে তার কাছ থেকে টাকা চাইলে তিনি জানান, মসজিদে ওই টাকা তিনি দান করে দিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে শিক্ষকসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষকনেতা আফতাবুল করিম মেনন বলেন, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার স্যারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে পিটিআই অফিসার বরাবরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ দায়ের করার বিষয়ে নেতৃত্ব দেন আমিসহ নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা ম্যাম। মূলত আমাদের নেতৃত্বে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে চাঁদাদাবিসহ অসদাচরণের অভিযোগ দায়ের করেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

‘শাহীনুর আক্তার স্যারের দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়াই আমাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার দাবি করছি। ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তার বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী আমি ট্রেনিংয়ের ব্যয় নির্বাহ করে থাকি। আফতাবুল করিম মেনন, নাজমুল হাসান ও শামীমা আক্তার সীমা ট্রেনিংয়ে ব্যাগ সাপ্লাই করে ব্যবসা করার সুযোগ দিতে বলেছিলেন আমাকে। যদি সেই সুযোগ তাদের দেওয়া না হয় তাহলে প্রতি ব্যাচের জন্য তারা তিন হাজার টাকা চা-মিষ্টি খেতে দেওয়ার দাবি জানান। যা একপ্রকার চাঁদাবাজি। বিষয়টি সরকারি চাকরি বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। স্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

‘আপনার বিরুদ্ধে ওই তিন শিক্ষক অভিযোগ দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে আপনি পাল্টা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন’— এমন দাবি করেছেন বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকগণ। এ বিষয়ে কী বলতে চান? উত্তরে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই তারা আমার কাছে ব্যবসা এবং চাঁদা দাবি করে আসছিল। এতদিন বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অনুরোধে তাদের প্রতি মায়া দেখিয়ে আমি অভিযোগ দিইনি। এবার অভিযোগ দিয়েছি এবং তারা শাস্তিও পেয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূরুল হাসান  বলেন, ‘তিনজন শিক্ষক ভেদরগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের কাছে চাঁদাদাবিসহ অসদাচরণ করেছেন বলে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সাধারণত অভিযোগ পাওয়ার পরই প্রথমে অভিযুক্তদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর তদন্ত কমিটিসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এমনই নিয়ম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের। সরকারি কর্মচারী আইন- ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকগণ প্রথমে শাহীনুর আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। ওই শিক্ষকদের দাবি, শাহীনুর আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে তিনি তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন— উত্তরে নূরুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষকদের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়টি পিটিআই কর্মকর্তার দেখার কথা। এটি আমার বিষয় নয়।’আর কোনো তথ্য পেতে হলে আপনাদের ডিজির অনুমতি আনতে হবে।’ এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আর কোনো কথা বলেননি।

শরীয়তপুরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) সুপারিনটেনডেন্ট কামরুন নাহার বলেন, ‘ইন্সট্রাক্টর শাহীনুর আক্তারের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048849582672119