দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাবি: করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রায় সব বিভাগ বা ইনস্টিটিউটেই কম-বেশি সেশন জট রয়েছে। সবথেকে বেশি সেশন জট থাকা বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের একটি ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইইআর)। বর্তমানে তীব্র সেশন জট সৃষ্টি হয়েছে ইনস্টিটিউটটিতে। এই অবস্থার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা আর গ্রুপিংকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। ইনস্টিটিউটটি যথাযথভাবে চালাতে না পারলে বন্ধ করে দেয়ার মতো দাবিও তুলেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষকদের দায়িত্বের অবহেলা আর গ্রুপিংয়ের ফলে আইইআরের শিক্ষার্থীদের জীবন এখন দুর্বিষহ। নিয়মিত ক্লাস, ইনকোর্স আর সময়মত পরীক্ষা না নেয়ায় সেশন জট বেড়েই চলেছে। ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর এখনো শেষ হয়নি।
২০১৭-১৮ সেশনের অনার্স শেষ হবার এক বছর হয়ে গেলেও মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হয়নি। ফার্স্ট ইয়ারের ফার্স্ট সেমিস্টার পরীক্ষা কবে হবে, তারাও জানেন না। এ অবস্থায় কিছুদিন পরই আরও একটি নতুন ব্যাচ আসছে।
সেশন জটের বিষয়ে মাহফুজ ঢালি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আইইআরের শিক্ষকদের এখন কাজ দুটি, প্রতি সপ্তাহে ফলহীন মিটিং আর প্রতিটা শিক্ষার্থীর হতাশা ও দীর্ঘশ্বাসের কারণ হওয়া। একটা ইনস্টিটিউট দায়-দায়িত্ব ভুলে এত উদাসীন হতে পারে, তা না দেখলে বোঝা যাবে না। নোংরা রাজনীতি, গ্রুপিং, দায়িত্বে অবহেলা―সবমিলে মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শুধু শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট যেখানে করোনাকালীন ক্ষতির ঘাটতি পোষাতে মরিয়া, সেখানে এখানকার শিক্ষকদের কোনো মাথাব্যথাই নেই। কারণ তাদের তো বেতন-ভাতা আটকে থাকছে না, আরাম আয়েশে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো জবাবদিহিতার জায়গা নেই। তারা যা চান, তাইই করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একটা সেমিস্টার শেষ হচ্ছে মোটামুটি এক বছর ধরে। বছর বছর শুধু নতুন নতুন ব্যাচ আসছে, কিন্তু সিনিয়র ব্যাচ বের হবার নাম নেই। যোগ্যতা না থাকলে কিছুদিন আইইআরকে বন্ধ রাখা উচিত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন মশকরা করার অধিকার কারো নেই। জবাবদিহিতার জায়গা নেই, কোনো দায় নেই, যেমন খুশি তেমন চলছে ইনস্টিটিউট। বন্ধ ঘোষণা করা হোক রাবি আইইআর। এভাবে আর চলতে পারে না। উপাচার্য স্যারের কাছে অনুরোধ, আপনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করুন, পদক্ষেপ নিন। দয়া করে আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাঁচান, আমরা নিরুপায়।
গ্রপিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সেশন জটের বিষয়ে ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমি পরিচালক হওয়ার আগে থেকেই ইনস্টিটিউটে সেশন জট ছিল। আর শিক্ষক সংকট রয়েছে। মাত্র দশজন শিক্ষক নিয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, সান্ধ্যকালীন কোর্স, এতগুলো প্রোগ্রাম চালানো একটু কঠিন হয়ে গেছে। এজন্য অন্যান্য বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। শিক্ষকদের মধ্যে তেমন কোনো গ্রুপিং নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।