ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা তোফাজ্জল হোসেনকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তার মামাতো বোন। তোফাজ্জলের মামাতো বোন বলেন, ‘মূলত রাত ১১টার দিকে আমার বাবাকে ফোন দেয়া হয়। বলা হয়েছে, আপনি কি তোফাজ্জলের মামা? হ্যাঁ বলার পর, তারা বলে, আমরা ওরে আটক করেছি, হলে আছে। ওকে নিতে হলে টাকা দিতে হবে ৩৫ হাজার। ৩৫ হাজার টাকা দিয়া ছাড়ায়া নেন। নইলে আমরা তাকে ছাড়বো না, আরো মারব।’
বৃহস্পতিবার বেসরকারি সংবাদমাধ্যমে এ দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘তারে মারছে, আবার ভাত খাওয়াইছে। আবার মারছে, আবার খাওয়াইছে। একটা মানুষকে তো এভাবে মেরে ফেলে না। সে যদি একটা খুনিও হয়, তারে তো এরকম জীবন্ত মেরে ফেলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘তোফাজ্জলকে কেন মারা হচ্ছে, এই প্রশ্নে ফোনে বলা হয়, ও আমাদের হলে ঢুকেছে। পরে আমি বললাম, ও পাগল মানুষ। কোনো একটা অন্যায় যদি করে, আপনারা তাকে প্রশাসনের কাছে দেন। কিন্তু ওরে মাইরেন না।’
তোফাজ্জলের বাবা-মা নেই বলে জানান তার মামাতো বোন। এ সময় তিনি আরো বলেন, তোফাজ্জল এক সময় মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে, তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের রাজধানীর শাহবাগ থানায় নেয়া হয়েছে। আটকদের মধ্যে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাও আছেন। তার নাম জালাল আহমেদ। তিনি ছাত্রলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শুরুর পর তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন।
বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের সামনে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেয়া হয় তোফাজ্জল হোসেনকে। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে জানা যায়, তোফাজ্জল একজন মানসিক রোগী ছিলেন।
এ ঘটনায় এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে ৭ সদস্যের কমিটি।
বৃহস্পতিবার তোফাজ্জলকে হত্যার অভিযোগে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পৌনে ৮টার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চর থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানায়। পরবর্তী সময়ে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাঁকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। পরে ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনে গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পিছনে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধরক মারধর করলে তিনি অচেতন হয়ে পরে।
এজাহারে আরো বলা হয়, এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানালে তাদের সহায়তায় অচেতন যুবককে ধরাধরি করে মেডিক্যালে নেয়া হয়। পরে ওই যুবককে ঢাকা মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দিবাগত রাত পৌনে ১টার সময় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র : চ্যানেল টোয়েন্টিফোর